ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

দিল্লির চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে জীবন বাঁচাচ্ছেন ডা. রহমান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ১ জুলাই ২০২৫

দিল্লির চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে জীবন বাঁচাচ্ছেন ডা. রহমান

ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির নামকরা হাসপাতালের আরামদায়ক ক্যারিয়ার ছেড়ে বিহারের খগড়িয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে ফিরে গেছেন এক চিকিৎসক। উদ্দেশ্য—আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও যেন কেউ চিকিৎসার বাইরে না থাকে। মাত্র ₹৫০ রুপিতে রোগী দেখছেন তিনি। নাম তার ডা. এস এম জিয়াউর রহমান।

দিল্লির একটি নামকরা প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করার সময় ডা. রহমান দেখেন, একজন রোগী এসেছেন ১২০০ কিলোমিটার দূরের খগড়িয়া থেকে। রক্তচাপ ছিল ২০/১৫০। কৌতূহলে জানতে চান, রোগী কোথা থেকে এসেছে। উত্তর শুনে অবাক—সেই রোগীর গ্রাম তার নিজের জন্মস্থান! সেই মুহূর্তে মনে হয়, শুধু বড় শহরে নয়, গ্রামের মানুষের জন্যও ভালো চিকিৎসা থাকা জরুরি।

ডা. রহমান বলেন, “শহরে চিকিৎসা ব্যবসা, কিন্তু গ্রামে এটা জীবন-মরণের ব্যাপার।”

ডা. রহমান বেড়ে উঠেছেন বিহারের এক গরিব কৃষক পরিবারে। মাত্র পাঁচ বিঘা জমি আর তিনটি মহিষ ছিল পরিবারের সবকিছু। একদিন মাকে ও ছোট ভাইকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। টাকা কম থাকায় একজন কম্পাউন্ডার দু’জনকে এক প্রেসক্রিপশনে দেখাতে বললে অপমান করে। তখন থেকেই ঠিক করেন, "আমি এমন ডাক্তার হবো, যে কখনো টাকার অভাবে কাউকে ফিরিয়ে দেবে না।"

তিনি পাটনা মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন একটি দাতব্য সংস্থার বৃত্তি পেয়ে। এরপর দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে নন-ইনভেসিভ কার্ডিয়াক বিভাগে কাজ শুরু করেন। কিন্তু গ্রামের প্রতি দায়বদ্ধতা ভুলে যেতে পারেননি। শেষমেশ ২০১০ সালে খগড়িয়াতে প্রতিষ্ঠা করেন 'ন্যাশনাল মেডিকেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার'—৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল।

সাপের কামড় থেকে হৃদরোগ—সবই চিকিৎসা হয় এখানে
এই হাসপাতালে সাধারণ রোগের পাশাপাশি জরুরি সেবা যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক ও সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসাও হয়। প্রতিদিন ৭০ জনের মতো রোগী আসেন, অনেকেই ₹৫০ রুপির ফি দিতে পারেন না। তবুও চিকিৎসা বন্ধ হয় না। রোগীদের ভালোবাসা হিসেবে আসে ঘরে তৈরি দই, ঘি, শাকসবজি।

তিনি বলেন, “রাতে ১২টা পর্যন্ত রোগী দেখি। হৃদরোগীর জন্য মাঝরাতে বাড়ি ফিরি। কিন্তু যখন রোগী হাসিমুখে বলে, ‘ভালো আছি’, তখনই শান্তি পাই।”

২০২২ সালে হমজা খালিদের বাবা স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। বেগুসরাইয়ের একটি হাসপাতালে এক সপ্তাহে বিল হয় ₹১ লাখ রুপি। তখনই ডা. রহমান বিনামূল্যে ICU তে ভর্তি করে দেন। শুধু হমজা নয়, এমন অসংখ্য মানুষ তার মানবিকতার সাক্ষী।

কখনো কি আফসোস হয় শহরের মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. রহমান বলেন, “আমি সাধারণ জীবন বেছে নিয়েছি। আমার বাড়ি ভরে ওঠে রোগীদের ভালোবাসায়। এটা অর্থের চেয়ে অনেক বড়।”

মুমু ২

×