
গাজায় ত্রাণ নিতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির ভিড়
গাজার রাফাহ শহরের কাছে একটি বিতর্কিত নতুন বিতরণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এতে তিন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জেনেভায় সাংবাদিকদের কাছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের ফিলিস্তিন বিষয়ক প্রধান আজিথ সংঘে বলেন, ঘটনার প্রাথমিক প্রমাণ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিকেই দায়ী করছে। বুধবার গাজার সর্ব দক্ষিণের শহর রাফাহর কাছাকাছি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। খবর আলজাজিরার।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক সাংবাদিকসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, নতুন ত্রাণকেন্দ্রটির চারপাশে থাকা বেড়া উপড়ে ঢুকে পড়ে হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষ। সে সময় ইসরাইলি ট্যাঙ্ক ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়। ঘটনাস্থলে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে একটি সংস্থা মাত্র একদিন আগে ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রটি স্থাপন করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সমর্থিত এই সংস্থা গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করার কথা বলে। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা এই ব্যবস্থাকে অকার্যকর ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তাদের আশঙ্কা, এ ব্যবস্থা ইসরাইলের পক্ষ থেকে একটি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। জিএইচএফ জানিয়েছে, তারা চারটি বিতরণকেন্দ্র গড়ে তুলেছে। যার মধ্যে দুটি চালু হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোর চারপাশে সুরক্ষা বেড়া ও বালির বাঁধ থাকায় সেগুলোর চেহারা হয়ে উঠেছে ঘাঁটির মতো। সংস্থাটি দাবি করেছে, তাদের ভাড়া করা নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি চালায়নি। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু সময়ের জন্য তারা সরে গিয়েছিল। জাতিসংঘসহ মানবিক সংস্থাগুলো এই বিতরণ ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, এটি আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিমালার পরিপন্থি এবং ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের আশঙ্কা তৈরি করছে। ক্ষুধার্ত মানুষ ত্রাণের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের কাছে যেতে বাধ্য হলে তা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন হবে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাগুলো।
ইসরাইল দাবি করে, এই বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে হামাসের হাতে ত্রাণ যাওয়ার ঝুঁকি কমানো যাবে, যদিও বড় পরিসরে ত্রাণ অপব্যবহারের প্রমাণ এখনো তারা উপস্থাপন করতে পারেনি। অন্যদিকে জাতিসংঘ বলছে, ত্রাণের অপব্যবহার রোধে তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাই যথেষ্ট। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি অবরোধের কারণে পুরো গাজা উপত্যকা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এদিকে শর্ত সাপেক্ষে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে বলে জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি বলেছে, তেলআবিব যদি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় তা হলে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে ইচ্ছুক।
বুধবার জাকার্তায় সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক বৈঠকে ইসরাইলের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে কথা বলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো। তিনি আরও বলেন, তার প্রত্যাশা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ব্যাপারে ফ্রান্স যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অব্যাহত রাখবে।