ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানির গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা: মুসল্লিদের জন্য করণীয় ও বর্জনীয় জানালেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

প্রকাশিত: ১২:২৮, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১২:৪২, ১ জুন ২০২৫

কোরবানির গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা: মুসল্লিদের জন্য করণীয় ও বর্জনীয় জানালেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানি সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন  ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খ আহমাদুল্লাহ। মুসল্লিদের মধ্যে সাধারণ কিছু ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তি দূর করতে এ আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ধর্মীয় বিশ্লেষকরা।

 

চুল-নখ কাটা নিষেধ
যারা কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, তাদের জন্য জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানির দিন পশু জবাই না করা পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটার সুন্নত রয়েছে। এটি পালন করা মুস্তাহাব, তবে কেউ ভুলে কাটলে গোনাহ হবে না।

 

কোরবানি ও আকিকা একসঙ্গে
অনেকে প্রশ্ন করেন, একই পশুতে কোরবানি ও আকিকা দেওয়া যাবে কি না। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু ওলামা একে জায়েজ মনে করলেও, অধিকাংশ আলেম একে নিরুৎসাহিত করেছেন। বিশেষ করে হানাফি মাজহাবের প্রবীণ আলেমরা একে অযৌক্তিক বলেছেন।

 

জবাইয়ে বিসমিল্লাহ না বললে কি হবে?
ইচ্ছাকৃতভাবে ‘বিসমিল্লাহ’ না বললে জবাই শুদ্ধ হবে না। তবে কেউ যদি ভুল করে না বলে ফেলে, তাহলেও পশু হালাল থাকবে বলে অভিমত দেন তিনি।

 

হাঁস-মুরগি জবাই বিষয়ে ভুল ধারণা
কোরবানির দিন হাঁস-মুরগি জবাই করা যাবে না—এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে হাঁস-মুরগি জবাইকে কোরবানি হিসেবে গণ্য করা যাবে না।

 

জবাইয়ের আগে চামড়া ছাড়ানো হারাম
জীবিত পশুর চামড়া ছাড়ানো ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পশু নিস্তেজ হয়ে মারা যাওয়ার পরেই চামড়া ছাড়াতে হবে।

 

দিনের প্রথম আহার কোরবানির গোশত
পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঈদুল আজহার দিনে দিনের প্রথম খাবার হিসেবে কোরবানির গোশত গ্রহণ করতেন। তাই এটি সুন্নত হিসেবে পালন করা উত্তম।

 

হাজিদের জন্য দেশে কোরবানি জরুরি নয়
যারা হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করছেন, তাদের জন্য বাংলাদেশে আলাদাভাবে কোরবানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা হজের নিয়ম অনুযায়ী ‘দমে শোকর’ পালন করলেই যথেষ্ট।

 

কোরবানির গোশত বিতরণ ও উদ্দেশ্য
গোশত তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ নিজে রাখা, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া এবং এক ভাগ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা মুস্তাহাব। তবে এতে বাধ্যবাধকতা নেই।

 

ওলিমার উদ্দেশ্যে কোরবানি জায়েজ নয়
যদি কেউ শুধুমাত্র বিয়ের ওলিমার খরচ বাঁচাতে কোরবানি দেন, তবে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তবে আলাদা করে ওলিমার জন্য কোরবানি দিলে বা এ উদ্দেশ্য প্রধান না হলে তা জায়েজ হবে।

 

অংশীদারের আয় হারাম হলে কোরবানি শুদ্ধ নয়
যে ব্যক্তি হারাম আয় থেকে কোরবানি দেন বা তার উদ্দেশ্য কেবল মাংস পাওয়া—এমন কেউ কোরবানির অংশীদার হলে সেই পশুতে অন্য অংশগ্রহণকারীদের কোরবানিও বাতিল হয়ে যাবে। তাই সতর্কভাবে সঙ্গী নির্বাচন করতে হবে।

 

ভাগীদারদের নাম জপা কি জরুরি?
পশু জবাইয়ের সময় কোরবানিদাতাদের নাম নেওয়া মুস্তাহাব, তবে আবশ্যক নয়। নাম না নিলেও নিয়ত সহি থাকলে কোরবানি কবুল হবে।


সঠিক নিয়ত, হালাল উপার্জন, ইসলামি নিয়ম মেনে কোরবানি দেওয়া এবং সামাজিক প্রভাব বা লোকলজ্জার কারণে নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করা—এসবই ইসলামে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে।

আঁখি

×