
বাংলাদেশে স্থানীয় প্রশাসন কাঠামো একপ্রকার ভেঙে পড়েছে এবং এর ফলে জনগণ ন্যূনতম সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। একটি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নির্বাচন না দিলে এই সেবা সংকট কাটবে না।
ফুয়াদ বলেন, “বাংলাদেশে আমরা এমন একটা সময় বাস করছি, যখন একদম স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত কোথাও কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পঞ্চায়েত চেয়ারম্যান, মেম্বার ছিল। অথচ আজ তেমন কেউ নেই।”
তিনি উল্লেখ করেন, “আমি গত অক্টোবর-নভেম্বর থেকেই দাবি করে আসছি, বিএনপি-জামাত বিদ্রোহী পটভূমি থেকে যারা সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক। কারণ সম্পূর্ণ স্থানীয় প্রশাসন কাঠামো ভেঙে পড়েছে।”
ফুয়াদের দাবি, ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ চেয়ারম্যান ও মেম্বার আওয়ামী লীগের হলেও তারা বর্তমানে পলাতক। ফলে দায়িত্ব পালন করছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা। কোথাও গরুর হাট বসছে, কোথাও ঠিকাদাররা পরিচালনার দায়িত্ব নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “সিটি কর্পোরেশন, ওয়ার্ড, উপজেলা, জেলা পরিষদ ও পৌরসভা সবই বাতিল করে দিয়েছেন। অথচ সেসবের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। তাহলে কেন এমন সিদ্ধান্ত? আপনার কি কোনো বিকল্প চিন্তা ছিল?”
ফুয়াদ দাবি করেন, বর্তমান সময়ে প্রশাসনে যারা বসানো হয়েছে, তারা ১৬ বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের দালালি করেছে, রাতের ভোটে সহায়তা করেছে। কিছুদিন আগেও তারা ম্যাজিস্ট্রেসি করতে গিয়ে গুলি চালিয়েছে সেনা সদস্যদের দিকে। অথচ এদের কাউকে বরখাস্ত বা শাস্তি দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, “এভাবে হঠাৎ করে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিটি ইউনিট ভেঙে দেওয়ার ফলে চরম সেবা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এটি সরকারের নীতিগত ভুল।”
ফুয়াদ দাবি করেন, তিনি সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী হাসান আরিফের সঙ্গে এই বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন এবং মন্ত্রী তার মতের সঙ্গে একমত হয়েছিলেন যে, এই সিদ্ধান্ত ভুল।
তিনি বলেন, “বিএনপির মহাসচিব পর্যন্ত এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বলেছেন, যেসব পৌরসভায় বিএনপির মেয়র আছে, তাদের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমি সেই দাবিকেই সমর্থন করি। প্রায় ৫৭০০ কাউন্সিলরের মধ্যে ১৭০০ থেকে ১৮০০ জন বিএনপি-জামাত বা স্বতন্ত্র ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের অন্তত প্রশাসকের দায়িত্ব দিলে একটা কাঠামো দাঁড়াতো, মানুষ ন্যূনতম সেবা পেত।”
তিনি আরো বলেন, “জন্মনিবন্ধন, সম্পর্কের সনদ, এনআইডি, পাসপোর্ট রিনিউ—এসবের জন্য মানুষ ছয় মাস ঘুরছে, কিন্তু কোনো সার্টিফিকেশন পাচ্ছে না। কারণ ইউনিয়ন পরিষদ নেই। মানুষ বিদেশ যেতে পারছে না, কাজ আটকে গেছে।”
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “আপনি যদি মনে করেন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া কাউকে দায়িত্ব দেবেন না, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। এতে অন্তত স্থানীয় পর্যায়ে সেবা সংকট আর থাকবে না। মানুষ বাঁচবে।”
তিনি আরো বলেন, “হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে দেখেছি—সেবাব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। ঠিকাদারেরা আগের আমলের, আওয়ামী লীগের পুরোনো ঠিকাদাররা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য দলের কেউ সুযোগ পাচ্ছে না, কারণ তাদের ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নেই।”
সবশেষে ফুয়াদ বলেন, “আপনি যেই কাঠামো সংস্কারের কথা বলছেন, বাস্তবে তা আপনারই নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেবল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নয়, গোটা স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থাটিই এখন ভেঙে পড়েছে। আপনার হাজার হাজার ইউনিট জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভায় রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে ম্যাক্রো রেজল্যুশনে যেতে হবে।”
নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে একটি কার্যকর প্রশাসন ও সেবা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র:https://tinyurl.com/uddym4e8
আফরোজা