ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আনারসের রাজধানী মধুপুর!

মোঃ রনি রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১২:১০, ১ জুন ২০২৫

আনারসের রাজধানী মধুপুর!

ছবি: জনকণ্ঠ

আনারসের রাজধানীখ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিষমুক্ত আনারস উৎপাদনের ফলে চাহিদা বেড়েছে আগের চেয়ে বহুগুণ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে এসব আনারস। বিশেষ করে গড় অঞ্চলভুক্ত এলাকায় উৎপাদিত ‘জলডুগী’ বা ‘জায়েন্ট কিউ’ এবং ‘কলম্বিয়া’ জাতের আনারসের ইউরোপীয় বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। চলতি বছরে ৫ মেট্রিক টনের বেশি রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চাষিরা জানিয়েছেন, মধুপুর ছাড়াও ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় কয়েক বছর ধরে ব্যাপক আনারসের চাষ হচ্ছে। ফলন যেমন ভালো হচ্ছে, তেমনি মিলছে সন্তোষজনক দামও। চলতি বছরে টানা দাবদাহের কারণে আনারসের চাহিদা ও বাজারমূল্য বেড়েছে। ফলে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। আগামীতে চাষের পরিধি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে মধুপুর অঞ্চলে আনারসের চাষ হয়েছে ৬,৫৮২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২,৬১,৬০০ টন। বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি টাকারও বেশি। চাষিরা মনে করছেন, এবার উৎপাদন ও বিক্রি—দু’টিতেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরে ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা আন্তর্জাতিকমানের এমডি-২ জাতের প্রায় ছয় লাখ আনারস চারা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এসব আনারসের সংরক্ষণক্ষমতা এক মাস পর্যন্ত হওয়ায় বিদেশে রপ্তানি করা সহজ হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, অতিমাত্রায় হরমোন ও ক্ষতিকারক রাসায়নিক প্রয়োগ বন্ধে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিদের এসব ক্ষতির দিক সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে এবং বিষমুক্ত চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় চাষিরা এখন অনেকটাই বিষমুক্ত পদ্ধতিতে আনারস চাষ করছেন। যার ফলে উন্নতমানের আনারস উৎপাদন হয়েছে এবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চলছে আনারসের ভরা মৌসুম। গড়াঞ্চলের চাষি, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোর থেকে রাত অবধি ব্যস্ত সময় পার করছেন। মধুপুরের জলছত্র, মোটের বাজার, গারোবাজার ও সাগরদিঘির আনারস হাটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। সকাল থেকেই সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, অটোবাইক ও ঘোড়ার গাড়িতে করে চাষিরা বাজারে নিয়ে আসছেন আনারস। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকাররা এসব আনারস ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এক একটি আনারস উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৭ থেকে ২০ টাকা। ছোট আকারের আনারস পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়, মাঝারি আকারের ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় এবং বড় আকারের আনারস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। তবে রাজধানীতে এক একটি বড় আনারসের দাম দাঁড়াচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।

মধুপুরসহ গোটা টাঙ্গাইল জেলায় উন্নত জাতের আনারস উৎপাদনের ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আনারস চাষ, বাজারজাতকরণ, বেচাকেনা ও পরিবহনকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল কর্মসংস্থান। বিশেষ করে তরুণ ও দিনমজুর শ্রেণির জন্য এটি হয়ে উঠেছে আয়ের অন্যতম উৎস।

মুমু

×