ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পুতিনের বন্ধু আফ্রিকার নতুন আয়রনম্যান!

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১৬ মে ২০২৫

পুতিনের বন্ধু আফ্রিকার নতুন আয়রনম্যান!

ছ‌বি: সংগৃহীত

ইব্রাহিম ট্রাওরে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আফ্রিকার নতুন বিপ্লবের মুখ। বয়স মাত্র ৩৭। এক সময় ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন, এখনো গায়ে থাকে সেনা পোশাক। আফ্রিকার ছোট দেশ বুরকিনা ফাসোর নেতা ইব্রাহিম ট্রাওরে আজ গোটা বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রে। ফ্রান্সসহ পশ্চিমা শক্তির দশকব্যাপী শোষণের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন তিনি। দেশ থেকে কার্যত ফরাসি প্রভাব পুরোপুরি হটিয়ে দিয়েছেন এই তরুণ নেতা। নিজেকে গড়ে তুলেছেন প্যান-আফ্রিকান বিপ্লবের এক নতুন প্রতীকে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এই নেতা রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করে পশ্চিমা জোটের মুখে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। ২০২২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় এসে তিনি দেশের নিরাপত্তা জোরদারে রুশ প্যারামিলিটারি বাহিনীর সহায়তা নেন। এরপর থেকেই তিনি দেশের খনিজ সম্পদের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা শুরু করেন।

ইতোমধ্যে পশ্চিমা খনি কোম্পানিগুলোর একাধিক প্রকল্প জাতীয়করণ করেছেন ট্রাওরে। এপ্রিলে একটি নতুন স্বর্ণখনির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে রুশ প্রতিষ্ঠান ‘নর্থ গোল্ড’-কে। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয়েছে একটি জাতীয় স্বর্ণ ভাণ্ডার গঠনের পরিকল্পনা। পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের খনিজ লুটপাটের অবসান ঘটিয়ে দেশীয় স্বার্থে সম্পদ ব্যবহারের নতুন দিগন্ত খুলেছেন তিনি।

পশ্চিমা শক্তির বিপক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান শুধু বুরকিনা ফাসোতেই নয়, গোটা আফ্রিকাজুড়েই আলোড়ন তুলেছে। আফ্রিকান-আমেরিকান এবং কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশদের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই তাকে দেখছেন “আফ্রিকার নতুন আশা” হিসেবে।

ট্রাওরেকে তুলনা করা হচ্ছে ১৯৮০’র দশকের বিপ্লবী প্রেসিডেন্ট থমাস সানকারার সঙ্গে, যিনি আফ্রিকান ‘চে গুয়েভারা’ হিসেবে পরিচিত। সেই ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে ট্রাওরে নিজেকে তুলে ধরছেন জনগণের নেতা হিসেবে। কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্রদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন নিয়মিত। তার বক্তৃতা, আবেগপূর্ণ উপস্থাপনা এবং তারুণ্য তাকে আলাদা করেছে বর্তমান আফ্রিকার ক্ষমতালোভী, বৃদ্ধ রাজনীতিবিদদের থেকে।

২০২৩ সালে রাশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলনে তার ‘উপনিবেশিকদের ইশারায় আর নাচব না’ বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তোলে। অনেকেই তাকে বলছেন আফ্রিকার ‘নতুন আয়রনম্যান’।

তবে সবকিছুর মধ্যেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বুরকিনা ফাসোতে গত এক দশকের বিদ্রোহ এখনো পুরোপুরি দমন করতে পারেননি তিনি। মার্কিন আফ্রিকান কমান্ড অভিযোগ করেছে, ট্রাওরে দেশের স্বর্ণসম্পদ নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই ব্যবহার করছেন। যদিও এই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা’ হিসেবে দেখছে দেশটির জনগণ, এবং এর বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভও প্রকাশ পেয়েছে।

আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, নিরাপত্তা সংকটের মধ্যেও বুরকিনা ফাসোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। চরম দারিদ্র্য কমছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে।

ট্রাওরের নেতৃত্বে বুরকিনা ফাসো, মালি এবং নাইজার ফ্রান্সের প্রভাব থেকে বেরিয়ে গঠন করেছে নতুন একটি আঞ্চলিক জোট। এই পরিবর্তন পশ্চিম আফ্রিকার রাজনীতিতে এনেছে এক নাটকীয় মোড়।

আফ্রিকার এই তরুণ নেতা আজ শুধু এক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নন, তিনি হয়ে উঠেছেন এক নতুন যুগের প্রতিরোধের প্রতীক।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=ph5W_ZCJp_M

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×