ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উত্তর গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে প্রায় ১০০ জন নিহত: উদ্ধারকর্মীদের দাবি

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ১৬ মে ২০২৫

উত্তর গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে প্রায় ১০০ জন নিহত: উদ্ধারকর্মীদের দাবি

ছবিঃ সংগৃহীত

উত্তর গাজায় ইসরায়েলি স্থল, বিমান ও সমুদ্রপথে পরিচালিত একটি ব্যাপক সামরিক অভিযানে অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই তথ্য জানিয়েছেন। 

এই হামলা, যা শুক্রবার (১৬ মে) ভোরে শুরু হয়, ইসরায়েল মার্চ মাসে পুনরায় অভিযান শুরু করার পর থেকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।হামাস-চালিত সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, রাতভর বিমান হামলায় অন্তত নয়টি বাড়ি ও শরণার্থী তাবু ধ্বংস হয়েছে এবং অনেক মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেইত লাহিয়া এলাকায় ধোঁয়ার বোমা, ট্যাঙ্কের গোলাবর্ষণ এবং ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ও এলাকার বাসিন্দা বাসির আল-গান্দুর, যিনি হামলার পর বেইত লাহিয়া থেকে জাবালিয়ায় পালিয়ে যান, বিবিসিকে বলেন: “রাতের বেলা যখন সবাই ঘুমাচ্ছিল, তখন চারদিক থেকে বোমা পড়তে শুরু করে—আকাশ থেকে, সমুদ্র থেকে। আমার ভাইয়ের বাড়ি ধসে পড়ে, যেখানে ২৫ জন ছিলেন। পাঁচজন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে আমার ৫ ও ১৮ বছর বয়সী দুই ভাগ্নি এবং ১৫ বছর বয়সী এক ভাগ্নে ছিল। আমার ভাইয়ের স্ত্রী এখনও ধ্বংসস্তুপের নিচে। হামলার তীব্রতায় আমরা কাউকে উদ্ধার করতে পারিনি। আমরা কিছুই সঙ্গে নিতে পারিনি—না খাবার, না কাপড়, না জুতা। খালি পায়ে পালাতে হয়েছে।”

আরেক বাসিন্দা ইউসুফ সালেম বলেন, “আমি ও আমার তিন সন্তান মৃত্যুর হাত থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছি। আমাদের পাশের বাড়িতে বিমান হামলা হয় কেউই বেঁচে নেই। তখন আমাদের বাড়ির কাছেই শেল পড়তে থাকে। আমরা বাড়ি ছাড়ার চেষ্টা করি, তখন একটি ড্রোন গুলি ছুড়তে থাকে।”

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা গাজার উত্তরাংশে “সন্ত্রাসী অবকাঠামো খুঁজে ধ্বংস করার জন্য” তারা এ অভিযান পরিচালনা করছে এবং কয়েকজন “সন্ত্রাসীকে” হত্যা করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা জুড়ে ১৫০টিরও বেশি “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু” ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করে আইডিএফ।

এটি মার্চের পর থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় স্থল অভিযান। আল-সালাতিন পাড়ায় ট্যাঙ্ক প্রবেশ করেছে এবং একটি স্কুল ঘিরে রেখেছে, যেখানে শত শত শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল। শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট ফেলে বাসিন্দাদের অবিলম্বে সরে যেতে বলে, যা ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

এলাকার বাসিন্দা সানা মারুফ, যিনি গাজা সিটি থেকে গাধার গাড়িতে করে পরিবার নিয়ে পালাচ্ছিলেন, বলেন, “আমি শপথ করে বলছি, জানি না কোথায় যাচ্ছি। আমাদের কাছে খাবার, পানি, কম্বল, বিছানার কিছুই নেই। রাতে মানুষকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। পুরো রাতটাই ভয়ংকর ছিল।”

এদিকে, গাজার দক্ষিণাংশেও ব্যাপক বিমান হামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেখানে ১২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা দক্ষিণে হামাসের টানেল ও সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে এবং কয়েকজন “সন্ত্রাসীকে” হত্যা করেছে।

গাজায় তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল ১০ সপ্তাহ ধরে সম্পূর্ণ অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে, যা জাতিসংঘসহ অনেক দেশ কঠোরভাবে নিন্দা করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, এই অবরোধ হচ্ছে “চাপ সৃষ্টির মূল উপায়”, যাতে হামাস পরাজিত হয় এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়। তবে সাহায্য সংস্থাগুলি বলছে, গাজার বাসিন্দারা এখন অনাহারের মধ্যে রয়েছেন। জাতিসংঘ সমর্থিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার প্রায় ২.১ মিলিয়ন মানুষের সবাই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। ইসরায়েল বলেছে, গাজায় খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই; বরং “হামাস ত্রাণ লুট করে বিক্রি করছে”।

জাতিসংঘ ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষে দেশে ফিরে যাওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমাদের ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে হবে। অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।” মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেন, “মানবিক পরিস্থিতি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করছে।”

এই সংঘাতের সূচনা ঘটে ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ, যখন হামাস ইসরায়েল সীমান্তে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এর পর থেকে গাজায় প্রায় ৫৩,০০০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে গাজায় ৫৮ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২৩ জন জীবিত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

আরো পড়ুন  

×