
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার করেছেন। একই সঙ্গে তিনি দুদেশের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের নতুন চুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক তথ্যে জানানো হয়, ট্রাম্প ইউএই’র প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর নতুন এই চুক্তিগুলোর ঘোষণা দেন। এর মধ্যে রয়েছে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ১৪.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, যা বোয়িং-এর ২৮টি ৭৮৭ ও ৭৭৭এক্স বিমান কেনার জন্য নির্ধারিত হয়েছে। এই বিমানে জিই অ্যারোস্পেসের তৈরি ইঞ্জিন ব্যবহৃত হবে।
দুই দেশের মধ্যে একটি ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইউএই এআই অ্যাক্সেলারেশন পার্টনারশিপ’ স্থাপনের চুক্তিও হয়েছে। এছাড়াও, ট্রাম্প ও শেখ মোহাম্মদ ৫ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সর্ববৃহৎ এআই কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হবে।
সূত্রগুলো জানায়, এই চুক্তির ফলে ইউএই আরও উন্নত এআই চিপ প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার পাবে, যা আগে বিশেষত চীনের প্রযুক্তি অ্যাক্সেসের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে সীমিত ছিল।
ট্রাম্পের এই সফর উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোতে তার সাম্প্রতিক কূটনৈতিক অভিযানের অংশ। এর আগে তিনি কাতারে সফরের সময় জানান, দোহা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক স্থাপনায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।
ট্রাম্প বলেন, “আমি নিশ্চিত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএই’র সম্পর্ক আগের চেয়েও বড় এবং শক্তিশালী হবে।”
হোয়াইট হাউস জানায়, ট্রাম্পের মাধ্যমে ইউএই’র সঙ্গে ২০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং পূর্বঘোষিত ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রকল্পেও গতি এসেছে।
চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে এমিরেটস গ্লোবাল অ্যালুমিনিয়ামের পক্ষ থেকে ওকলাহোমায় ৪ বিলিয়ন ডলারের একটি অ্যালুমিনিয়াম স্মেল্টার কারখানা নির্মাণ। এছাড়াও, এক্সনমোবিল, অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়াম এবং ইওজি রিসোর্সেস সংস্থাগুলোর সঙ্গে আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির নতুন তেল ও গ্যাস উৎপাদন প্রকল্পে ৬০ বিলিয়ন ডলারের অংশীদারিত্ব চুক্তি হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, ইউএই প্রতিবছর মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া’র সবচেয়ে উন্নত ৫ লাখ এআই চিপ আমদানি করতে পারবে—এমন একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই উদ্যোগ ইউএই-তে ডেটা সেন্টার নির্মাণে গতি আনবে যা এআই মডেল উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ।
হোয়াইট হাউস আরও জানায়, ইউএই যুক্তরাষ্ট্রে যেসব ডেটা সেন্টার নির্মাণ করবে, সেগুলোর সক্ষমতা আমিরাতের ডেটা সেন্টারের সমান বা তার চেয়েও বেশি হবে। এছাড়াও, মার্কিন প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে ইউএই তাদের জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ট্রাম্পের চার দিনের উপসাগর সফরে আরও কিছু বড় বাণিজ্যিক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে কাতার এয়ারওয়েজের পক্ষ থেকে ২১০টি বোয়িং জেট কেনার চুক্তি, সৌদি আরবের ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ অঙ্গীকার এবং ১৪২ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অস্ত্রচুক্তি উল্লেখযোগ্য।
এই সফরে মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক আলোচনাও তীব্র হয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান একটি পারমাণবিক চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং তেহরান এ বিষয়ে আংশিক সম্মতি জানিয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর দীর্ঘস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে এবং তিনি সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ট্রাম্পের প্রশাসন উপসাগরীয় কিছু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি উপসাগরীয় দেশগুলোতে, বিশেষত ইউএই-তে, এআই চিপ-সংক্রান্ত সব চুক্তি বাস্তবায়িত হয়, তবে এই অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বে তৃতীয় এআই শক্তিকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি
রাকিব