
ছবিঃ সংগৃহীত
বয়স মাত্র ৩৭ বছর। সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি এবং এখনো সেনা পোশাক পরেন। তাঁর নেতৃত্বে, বুরকিনা ফাসো—আফ্রিকার একটি ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দেশ—পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ইব্রাহিম ট্রাওরে, দেশের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর, এক নতুন যুগের সূচনা করেছেন। তিনি আফ্রিকার জনগণের জন্য এক নতুন আশা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন এবং আফ্রিকা ছাড়িয়ে বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চরিত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
ট্রাওরে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একনিষ্ঠ ভক্ত, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আফ্রিকার সম্পদ রক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থের পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান ঘোষণা করেছেন। ২০২২ সালের সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসার পর, তিনি বুরকিনা ফাসো থেকে ফ্রান্সসহ পশ্চিমা শক্তিকে বের করে দেন এবং রাশিয়া ও রুশ প্যারামিলিটারি বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করেন। এর মাধ্যমে, দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং খনিজ সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এপ্রিল ২০২৩-এ, রুশ কোম্পানি নর্থ গোল্ডকে একটি নতুন স্বর্ণখনি প্রকল্পের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, তিনি একটি জাতীয় স্বর্ণ ভাণ্ডার গঠনের ঘোষণা দেন এবং পশ্চিমা খনি কোম্পানিগুলোর বেশ কয়েকটি খনি জাতীয়করণ করেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশের সম্পদ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক দখল থেকে বুরকিনা ফাসোকে মুক্ত করতে কাজ করছেন।
ট্রাওরেকে আজ আফ্রিকার নতুন যুগের বিপ্লবী নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সামাজিক মিডিয়ায় তার বিপ্লবী বক্তব্য ও উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব তাকে কোটি কোটি মানুষের আইকন করে তুলেছে। তাকে নিয়ে আফ্রিকার জনগণের মধ্যে এক ধরনের নতুবতলা উত্থান ঘটেছে এবং পশ্চিম আফ্রিকায় নতুন রাজনৈতিক শক্তির জন্ম হয়েছে। ২০২৩ সালে রাশিয়া আফ্রিকা সম্মেলনে তার বক্তৃতা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, যেখানে তিনি উপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ করেন।
তবে, তাঁর নেতৃত্বে বুরকিনা ফাসোতে বিদ্রোহ এখনো পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হয়নি। মার্কিন আফ্রিকান কমান্ডের দাবি, ট্রাওরে দেশের স্বর্ণসম্পদ নিজ নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করছেন। তবে, এই অভিযোগের বিরুদ্ধে দেশটিতে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সুরক্ষা সংকট থাকা সত্ত্বেও বুরকিনা ফাসোর অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে, দারিদ্র্য কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুরকিনা ফাসো, মালি এবং নাইজার, এই তিনটি দেশ একসঙ্গে পশ্চিমের প্রভাব থেকে বেরিয়ে নতুন একটি জোট গঠন করেছে, যা পশ্চিম আফ্রিকার রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ইব্রাহিম ট্রাওরে, তার তরুণ নেতৃত্ব, বিপ্লবী ভাবনা এবং শক্তিশালী দেশপ্রেমের মাধ্যমে আফ্রিকার জনগণের মন জয় করেছেন এবং তিনি আজকের আফ্রিকার জন্য একটি নতুন দিগন্তের সন্ধান দিচ্ছেন।
মারিয়া