সম্প্রতি রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধে পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলা চালানোর খবর আসছে। এতে আবারও দুই দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ছয়টি অঞ্চলে ৮৪টি ইউক্রেনীয় ড্রোন আটক করেছে, যার মধ্যে কিছু মস্কোর দিকে এগিয়ে আসছিল। এর ফলে মস্কোর তিনটি প্রধান বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটগুলো সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া শনিবার রাতে দেশটির সব অঞ্চলে ১৪৫টি ড্রোন হামলা চালায়, যার মধ্যে বেশিরভাগই গুলি করে ধ্বংস করা হয়। মস্কোর ওপর ইউক্রেনের এই হামলাকে "ভয়াবহ" আক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অঞ্চলটির গভর্নর।
রাশিয়ার রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিমের রামেনস্কয়ে এলাকায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে পাঁচজন আহত হয়েছে এবং চারটি বাড়িতে আগুন ধরে যায়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সেখানে ৩৪টি ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।
ইউক্রেনের ওডেসা অঞ্চলে ড্রোন হামলায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছে। ছবি থেকে দেখা যায়, কিছু ভবন থেকে আগুন জ্বলছে এবং ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার ইরানের তৈরি ৬২টি ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করা হয়, ৬৭টি ড্রোন হারিয়ে যায় এবং আরও ১০টি ড্রোন রাশিয়া ও প্রতিবেশী বেলারুশ এবং মলদোভার দিকে ফিরে যায়।
এছাড়া সোমবার রাতেও নতুন আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা কুরস্ক ও বেলগোরদ অঞ্চলের কাছাকাছি ১৩টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে।
ইতিমধ্যে, দক্ষিণ ইউক্রেনের মাইকোলাইভে রাশিয়ার বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছে এবং বসতবাড়িতে আগুন ধরেছে বলে জানিয়েছেন অঞ্চলটির গভর্নর ভিতালি কিম। আহত ৪৫ বছর বয়সী একজন নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এদিকে, যুদ্ধের শুরু থেকে অক্টোবর মাসে রাশিয়া সবচেয়ে বেশি সেনা হতাহতের মুখোমুখি হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান স্যার টনি রাডাকিন। তিনি বলেন, অক্টোবর মাসে প্রতিদিন গড়ে ১,৫০০ রুশ সেনা হতাহত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কী অবস্থান নিবেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বলেছিলেন, তিনি একদিনেই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারেন, যদিও কীভাবে তা করবেন তা জানাননি।
ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ব্রায়ান লাঞ্জা বিবিসিকে বলেছেন, নতুন প্রশাসন যুদ্ধ থামানোর ওপর জোর দেবে, তবে ইউক্রেনকে পুনরায় ভূমি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে না। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্পের একজন মুখপাত্র বলেছেন, লাঞ্জা তার পক্ষে কথা বলেন না।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রুশ সংবাদ মাধ্যমে বলেন, নতুন মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে "ইতিবাচক" সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি শান্তি চান এবং রাশিয়াকে পরাজিত করার ইচ্ছা তার নেই।
নির্বাচনের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন। জেলেনস্কি আগেও ভূমি ছাড়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন এবং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন এই যুদ্ধে পরাজিত হবে।
রোববার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, "স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হল শক্তি ও কূটনীতির সংমিশ্রণ।"
নাহিদা