ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

ইসরাইল-হিজবুল্লাহ উত্তেজনা বাড়ছে

বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা

প্রকাশিত: ২১:১০, ১৫ জুন ২০২৪

বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা

.

ইসরাইল লেবাননের ইরান-সমর্থিত ইসলামিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সীমান্তে ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মধ্য দিয়ে সংঘাতের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে চলেছে। এই সংঘাতের কারণে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বড় আকারের অভিযানের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গত আট মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চললেও সম্প্রতি এটি তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরাইল এখন তার উত্তর ফ্রন্টকে উপেক্ষা করতে পারছে না এবং সেখানে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে। খবর এএফপি সিএনএনের।

লেবানন ইসরাইল কয়েক দশক ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ১৯৮২ সালে ইসরাইল লেবাননে হামলা চালিয়ে রাজধানী বৈরুত পর্যন্ত ট্যাংক পাঠিয়েছিল। পরে ২২ বছর ধরে দক্ষিণ লেবানন ইসরাইল দখল করে রাখে। সেখানে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং ইসরাইলকে ওই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করে। হিজবুল্লাহ ইরান-সমর্থিত একটি লেবানিজ আন্দোলন। গোষ্ঠীটির মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনী রয়েছে। তারা ইসরাইলকে প্রতিহত করার দায়িত্বে নিয়োজিত এবং বৈরুত ইসরাইলকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। পশ্চিমা বিশ্বে হিজবুল্লাহকে প্রায়শই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসরাইল হিজবুল্লাহর সাম্প্রতিক শত্রুতা শুরু হয় যখন গত অক্টোবর হামাস ইসরাইলে হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে অপহরণ করে।

এরপর ইসরাইল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহ বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তারা ইসরাইলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইল হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাত ক্রমাগত বাড়ছে। সংঘর্ষের সংখ্যা এবং আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরাক, সিরিয়া লেবানন প্রকল্পের পরিচালক হেইকো উইমেন বলেছেন, এটি একটি ধীর গতির উত্তেজনা যা ক্রমাগত বাড়ছে। সীমান্তে দুই পক্ষের হতাহতের সংখ্যা এবং হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংঘাতের মধ্যে নতুন ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। জুন হিজবুল্লাহ প্রথমবারের মতো ইরানি তৈরি ফালাক রকেট ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে নিক্ষেপ করে। ফালাক পূর্ববর্তী ফালাক এর উন্নত সংস্করণ। এটির পাল্লা বেশি এবং বড় ওয়ারহেড রয়েছে। ইসরাইলের উত্তর সীমান্তে ইসরাইলি সেনা একটি প্রাচীন অস্ত্র ক্যাটাপল্ট ব্যবহার করেছে, যা ১৬তম শতাব্দী থেকে সামরিক বাহিনী দ্বারা খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছে। এতে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করে লেবাননের ভূখ- ম্যানগ্রোভ বন পোড়ানো হয়েছে। ইসরাইলি সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানিয়েছে, এটি একটি স্থানীয় উদ্যোগ ছিল এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়নি।

দুই পক্ষই কঠোর বক্তব্য দিয়ে আসছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যদি কেউ মনে করে তারা আমাদের ক্ষতি করতে পারে এবং আমরা নীরব থাকব, তারা ভুল করছে। যেভাবেই হোক আমরা উত্তরে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনব। হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা নাইম কাসেম বলেছেন, আমরা সর্বাত্মক যুদ্ধ চাইছি না। কিন্তু যদি তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, আমরা প্রস্তুত এবং পিছিয়ে যাব না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই পক্ষই হয়ত সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করতে চায় না। তবে তাদের উত্তেজক কর্মকান্ড যেকোনো সময় একটি সংঘাতকে উসকে দিতে পারে। ইসরাইলের গ্যালিলি অঞ্চলে রকেট হামলার কারণে বহু ঘরবাড়ি খালি করা হয়েছে। ইসরাইলি ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইটামার বেন গাভির বলেছেন, হিজবুল্লাহর সব শক্তিশালী ঘাঁটিকে পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে।

×