
ব্রাসেলসে ইইউ সদর দফতরের সামনে ইরান বিরোধী বিক্ষোভ
ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র দমনপীড়নের প্রতিক্রিয়ায় তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম এশীয় দেশটির মোল্লাতন্ত্রের ওপর চাপ বাড়াতে সোমবার তারা এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। খবর আলজাজিরা/বিবিসি/সিএনএনের।
ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ক এমনিতেই ভালো না, সেপ্টেম্বরে নীতি পুলিশ হেফাজতে কুর্দি নারী মাহশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিরতা দমনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সরকারি বাহিনীগুলো যে ভয়াবহ দমনপীড়ন চালিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কের ফাটল আরও বাড়াল । মাহশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরান যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দেখছে, তাকে ১৯৭৯ সালে ইসলামে বিপ্লবের পর দেশটির শাসকগোষ্ঠীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলা হচ্ছে। তেহরান এ অস্থিরতা উস্কে দেওয়ার জন্য পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীকে দায়ী করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল ইরানের প্রভাবশালী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী (আইআরজিসি) ও বিক্ষোভ দমনের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইআরজিসি কোঅপারেটিভ ফাউন্ডেশন ও এর পরিচালনা পর্ষদের পাঁচ সদস্যের ওপর। ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপমন্ত্রী নাসের রাশেদি এবং আইআরজিসির ৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তাদের কালো তালিকায় ঢুকেছে।
বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘বর্বর’ নিপীড়ন চালানো এবং অন্যান্য মানবাধিকার লংঘনের দায় দিয়ে বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর কিছু ইউনিটসহ ৩০ এর বেশি ইরানি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ব্রাসেলসে এক বৈঠকে ইইউর ২৭টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ পদক্ষেপের বিষয়ে সম্মত হন। রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন যেখানে বেশি, সেই সুন্নি অধ্যুষিত এলাকাসহ ইরানজুড়ে আইআরজিসির বিভিন্ন ইউনিট ও কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে এবারের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা। কারা কারা এই নিষেধাজ্ঞায় আছে তার একটি তালিকাও ইইউর জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, নতুন নিষেধাজ্ঞায় ১৮ ব্যক্তি ও ১৯টি প্রতিষ্ঠান পড়েছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া কর্মকর্তারা ইইউতে যেতে পারবেন না, ইইউতে থাকা তাদের সম্পদও জব্দ হতে পারে। সদস্যভুক্ত অনেক দেশ পুরো আইআরজিসিকে ইইউর ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ তালিকায় অন্তর্ভুক্তের জোর দাবি জানালেও জোটের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া কেবল তখনই সম্ভব হবে যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশ আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী বলে দোষী সাব্যস্ত করবে। যুক্তরাজ্যও সোমবার ইরানি জনগণের ওপর ‘নির্মম নিপীড়ন’ চালানোর অভিযোগে একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাজ্যে ইরানের সহকারী প্রসিকিউটর জেনারেল আহমাদ ফাজেলিয়ানে কোনো সম্পদ থেকে থাকলে, তা জব্দ হবে। অন্যায্য বিচার ব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মৃত্যুদ-কে ব্যবহার করা হয়, তার জন্য ফাজেলিয়ানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর।