ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজা যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করলো জার্মানি

প্রকাশিত: ০০:২৪, ৯ আগস্ট ২০২৫

গাজা যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করলো জার্মানি

গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর গাজায় ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে এমন সব ধরনের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। ২২ মাস ধরে চলমান সংঘাতের নতুন এই উত্তেজনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শুক্রবার এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মেরৎস। এর কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটি দখলের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

এর মাত্র এক দিন আগে নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছিলেন, আন্তর্জাতিক নিন্দা উপেক্ষা করে ইসরায়েলি সেনারা পুরো গাজা উপত্যকার পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ নেবে। চলমান যুদ্ধ ইতোমধ্যেই কয়েক দশক হাজার মানুষের প্রাণ নিয়েছে এবং ভয়াবহ খাদ্যসংকট সৃষ্টি করেছে।

মেরৎস বলেন, “এই পরিস্থিতিতে জার্মান সরকার গাজা উপত্যকায় ব্যবহৃত হতে পারে এমন কোনো সামরিক সরঞ্জামের রপ্তানি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনুমোদন দেবে না।”

যদিও তিনি ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ এবং হামাসের হাতে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির পক্ষে অবস্থান বজায় রাখেন, মেরৎস জোর দিয়ে বলেন যে বেসামরিক জনগণের ওপর ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ক্ষতি উপেক্ষা করা আর সম্ভব নয়। তাঁর ভাষায়, “গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরও কঠোর সামরিক পদক্ষেপ, যা গত রাতে মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে, জার্মান সরকারের জন্য এই লক্ষ্যগুলো কীভাবে অর্জিত হবে তা বোঝা ক্রমেই কঠিন করে তুলছে।”

শুক্রবার মেরৎসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন নেতানিয়াহু এবং জার্মানির এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেন। ইসরায়েলি সরকারের এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, জার্মানি আসলে হামাসকে পুরস্কৃত করছে এবং ইসরায়েলের ‘ন্যায্য যুদ্ধ’-কে সমর্থন দিচ্ছে না।

নতুন বৃহৎ আকারের ইসরায়েলি স্থল অভিযান কবে শুরু হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ এর জন্য বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন এবং বেসামরিকদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হবে, যা মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে পুষ্টিহীনতায় অন্তত ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৯৮ শিশু। ইসরায়েল মানবিক সহায়তার সরবরাহে কঠোর বিধিনিষেধ বজায় রাখায় জাতিসংঘ সমর্থিত এক জরিপ সতর্ক করেছে যে গাজায় ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে।

মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর পূর্ণ ও টেকসই প্রবেশাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান মেরৎস। তিনি বলেন, “পরিকল্পিত এই সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েলি সরকার বেসামরিক জনগণের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে আগের চেয়ে আরও বেশি দায়িত্ব বহন করছে।”

এছাড়া তিনি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখলের পথে কোনো পদক্ষেপ না নিতে সতর্ক করেন। গত জুলাইয়ে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট পশ্চিম তীর সংযুক্তির পক্ষে একটি প্রতীকী প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল।

জার্মান পার্লামেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ইসরায়েলে ৪৮৫ মিলিয়ন ইউরো (৫৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স দিয়েছে জার্মানি, যা দেশটিকে ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী করেছে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের ভাষ্য, ইসরায়েলি সেনারা “গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রস্তুতি নেবে, একইসঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে বেসামরিক জনগণকে মানবিক সহায়তা প্রদান করবে।”

 

 

 

সূত্র:আল-জাজিরা

আফরোজা

×