
ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন দেশের নেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করেছেন, এই সিদ্ধান্ত ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এবং নতুন করে গণ-অবস্থানচ্যুতির ঢেউ তুলবে।
শুক্রবার এই পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়, একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছিলেন, ইসরাইল সমগ্র গাজা উপত্যকার পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। বিশ্লেষকদের মতে, অবরুদ্ধ গাজায় ইতোমধ্যে চলমান খাদ্য সংকট ও মানবিক বিপর্যয় এই পদক্ষেপে আরও গভীর হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভল্কার টার্ক পরিকল্পনাটি অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এটি আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পরিপন্থী এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় একে "সম্পূর্ণ অপরাধ" হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি গণহত্যা, পদ্ধতিগত হত্যা, অনাহার এবং অবরোধের ধারাবাহিকতা। প্রেসিডেন্সি সতর্ক করেছে, এই পদক্ষেপ নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
হামাস সতর্ক করে বলেছে, এই সিদ্ধান্ত গাজায় আটক বন্দিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে। ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ একে "গণবিনাশের নতুন অধ্যায়" বলে উল্লেখ করেছে এবং আরব ও পশ্চিমা দেশগুলিকে এই আগ্রাসন ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার একে ভুল সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন। চীন বলেছে, গাজা ফিলিস্তিনিদের ভূমি এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিই মানবিক সংকট লাঘবের একমাত্র পথ। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্জ ঘোষণা দিয়েছেন, গাজায় ব্যবহৃত হতে পারে এমন কোনো সামরিক সরঞ্জাম ইসরাইলে রপ্তানি আপাতত বন্ধ থাকবে।
তুরস্ক, মিসর, সৌদি আরব ও জর্ডান একযোগে নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারাও পরিকল্পনাটি বাতিল না করলে ইইউ-ইসরাইল সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন। বেলজিয়াম ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে, স্পেন, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়াও কঠোর সমালোচনা করেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, এটি শান্তির সম্ভাবনাকে ধ্বংস করবে এবং চলমান বিপর্যয় আরও বাড়িয়ে তুলবে। ইসরাইলের বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ায়ির লাপিদ একে "প্রজন্মের জন্য বিপর্যয়" হিসেবে উল্লেখ করে নেতানিয়াহুকে চরম ডানপন্থীদের চাপে নতি স্বীকারের অভিযোগ তুলেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এই একযোগে প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করে দিচ্ছে, গাজা সিটি দখলের ইসরাইলি পরিকল্পনা কেবল আঞ্চলিক নয়, আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবাধিকারের জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ঘনিয়ে আসায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন গাজার দিকেই নিবদ্ধ।
সূত্র:আল-জাজিরা
আফরোজা