
সম্প্রতি হঠাৎ করেই আফগানিস্তানে দেখা গেল ভারতীয় কূটনীতিকদের। পেহেলগাম কাণ্ডের মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে কাবুলে তালেবান সরকারের উচ্চপদস্থ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা। ফলে আন্তর্জাতিক পরিসরে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন,নয়া দিল্লি আসলে কী বার্তা দিতে চাইছে?
এই সফর এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা তুঙ্গে। সেই প্রেক্ষাপটে, কাবুলে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের উপস্থিতি ঘিরে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। অনেকের মতে, ইসলামাবাদকে চাপে রাখতে কি তবে ‘টু-ফ্রন্ট ওয়ার’-এর কৌশল নিচ্ছে ভারত?
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের ওপর দুই দিক থেকে চাপ তৈরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই আফগানিস্তানে ভারতের কূটনৈতিক সক্রিয়তা বেড়েছে।
রবিবার কাবুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারত সরকারের পক্ষে অংশ নেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনন্দ প্রকাশ। তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভী আমির খান মুত্তাকীর সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকের পর বিস্তারিত কিছু জানানো না হলেও, আফগানিস্তানে বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারতীয় প্রকল্পগুলোর পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, ভিসা সংক্রান্ত বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। তবে এই বৈঠককে যে ইসলামাবাদ ভালো চোখে দেখবে না, তা সহজেই অনুমান করা যায়। যদিও এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া দেয়নি পাকিস্তান।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত,যা আন্তর্জাতিক পরিসরে ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত,এখনও বিরোধপূর্ণ। প্রায় ২৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্ত ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে, অনেকের ধারণা, এই বিরোধকেই কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে চাইছে দিল্লি।
আফগান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামক সংগঠনটি গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে। অনেকেই মনে করেন, আফগানিস্তানের মাটি থেকেই সক্রিয়ভাবে পরিচালিত হচ্ছে এসব অভিযান। এমনকি ভারতের পক্ষ থেকেও পরোক্ষ সহায়তার সন্দেহ উড়িয়ে দিচ্ছেন না নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় তৎপরতা জোরদার করেছে। সাম্প্রতিক এক অভিযানে ৭২ ঘণ্টায় ৭১ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের আইএসপিআর। নিহতরা সবাই পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলেও দাবি করা হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাসে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাদের অভিযানে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে।এই উত্তপ্ত অঞ্চলগুলোতেই আরেক আতঙ্কের নাম বালুচি লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। স্বাধীন বেলুচিস্তানের দাবিতে বহু বছর ধরেই পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এই গোষ্ঠী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীই যাদের প্রধান টার্গেট।
সব মিলিয়ে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দ্বন্দ্বে যখন উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বগামী, তখন অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাও কম নয় পাকিস্তানে। দেশজুড়ে চলছে উচ্চ সতর্কতা, সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ প্রস্তুত অবস্থায়।পর্যবসান হিসেবে বলা যায়, আফগানিস্তানে ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতা শুধু উন্নয়ন সহযোগিতা নয়, বরং পাকিস্তানকে চাপে রাখার বৃহত্তর কৌশলের অংশ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র:https://tinyurl.com/59znfs4p
আফরোজা