ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিমান হামলায় কাঁপল খার্তুম

চলছে লুটপাট, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ৭ লাখ ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ২০:৩২, ১০ মে ২০২৩

বিমান হামলায় কাঁপল খার্তুম

সুদানের রাজধানী খার্তুমে সেনাবাহিনীর  বিমান হামলায় ভবনসমূহের  ওপর থেকে বুধবার ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়

সুদানের রাজধানী খার্তুমে লুটপাট বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই শহরটির কেন্দ্রস্থলে ব্যাপক বিমান হামলার খবর দিয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, মঙ্গলবার সুদানের সেনাবাহিনী খার্তুমের কেন্দ্রস্থলে এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশে বিমান থেকে তুমুল বোমাবর্ষণ করেছে। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার দাবি করা প্রতিপক্ষ র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসও (আরএসএফ) প্রাসাদে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে; হামলায় প্রাসাদটি অনেকখানি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা। সেনাবাহিনীর একটি সূত্র আরএসএফের ওই ভাষ্য উড়িয়ে দিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
একইদিন সৌদি আরব জানিয়েছে, জেদ্দায় মধ্যস্থতাকারীরা সুদানের সেনাবাহিনী ও তাদের প্রতিপক্ষ আরএসএফ এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাজ করছেন। খার্তুমে গত মাসের মাঝামাঝি শুরু হওয়া দুই পক্ষের সংঘাত এরই মধ্যে লাখো মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার পাশাপাশি ত্রাণ সংকটের সূচনা ঘটিয়েছে। কেবল দেশটির ভেতরেই এক এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা এক সপ্তাহেই দ্বিগুণের বেশি হয়ে ৭ লাখে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা।

একের পর এক যুদ্ধবিরতি হলেও তা না মানা দুই পক্ষ শনিবার থেকে সৌদি আরবের বন্দরনগরী জেদ্দায় শুরু হওয়া আলোচনায় প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। ওই আলোচনা সম্পর্কিত প্রথম কোনো খবরে মঙ্গলবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত আল-এখবরিয়া টেলিভিশন জানায়, একটি ‘কার্যকর স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতিতে’ পৌঁছানোর লক্ষ্যে আলোচনা চলছে। সুদান যে মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে, সেই সতর্কবার্তার মধ্যেই জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস ত্রাণ নিরাপদে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা সংবলিত একটি ঘোষণায় সমর্থন দিতে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, জেদ্দায় ওই প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক মুখপাত্র। 
সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সংঘাতের কারণে সুদানের ভেতরেই অতিরিক্ত আরও ৫০ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন বলে অনুমান করছে জাতিসংঘ। এর বাইরে ৮ লাখ ৬০ হাজারের মতো মানুষ পালিয়ে আশপাশের দেশগুলোতে চলে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে: বিশ্বের ধনী দেশগুলো সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় সুদানের প্রতিবেশী ওই দেশগুলোও এখন সংকটের মধ্যেই রয়েছে। সুদানের চতুর্থ সপ্তাহে গড়ানো সংঘাতে মৃত্যু ৬০০ ছাড়িয়েছে বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের হিসাবে আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫ হাজারের ঘরে। তবে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সংঘাতের মধ্যে খার্তুম ও লাগোয়া দুই শহর ওমডুরমান ও বাহরিতে অরাজকতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ‘চুরি, ডাকাতি, ল্টুপাট যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, এগুলোই সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পুলিশ আর আইনের কোনো ধরনের উপস্থিতিই নেই,’ বলেছেন বাহরির ৪৫ বছর বয়সী বাসিন্দা আহমেদ সালেহ। লুটপাটকারীরা ঘরবাড়ি, দোকান, গুদাম সবকিছুকেই ‘টার্গেট’ করছে, বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সুদানের ব্যাংকগুলোর ইউনিয়ন কিছু কিছু ব্যাংকের শাখায় চুরি ও ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, পরিস্থিতি অনুমোদন করলেই ব্যাংকগুলো ফের তাদের সেবা চালু করতে চায়।

×