
ছবি: প্রতীকী
অনেকেই আমরা মাঝেমধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগি—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন সেই চিন্তাভাবনা থেমে না থেকে বারবার মাথায় ঘুরতে থাকে, ‘যদি এমন হতো’, ‘অতীতে কেন এমন করলাম’, কিংবা ভবিষ্যৎ আশঙ্কা নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভাবতে থাকি, তখন সেটি এক মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসকরা এটিকে বলছেন—‘ওভারথিংকিং’ বা অতিরিক্ত চিন্তা, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের জসলোক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের নিউরোলজিস্ট ও নিউরোমাসকুলার বিশেষজ্ঞ ডা. বিনয়া ভি. ভাণ্ডারি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “ওভারথিংকিং মানে শুধু অনেক চিন্তা করা নয়। এটি মূলত নেতিবাচক চিন্তার পুনরাবৃত্তি—অতীত নিয়ে আফসোস বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা। একে বলে ‘পারসেভারেটিভ কগনিশন’, যা ভাঙা অত্যন্ত কঠিন এবং এটি মস্তিষ্ক ও দেহ উভয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।”
কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত চিন্তায় মগ্ন থাকলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল অতিরিক্তভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ডা. ভাণ্ডারি জানান, ‘এই সময়ে প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স, অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট এবং লিম্বিক সিস্টেমে স্নায়বিক কার্যক্রম বেড়ে যায়। এই অঞ্চলগুলো আবেগ, মনোযোগ এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত। ফলে মস্তিষ্ক সর্বদা সতর্ক অবস্থায় থাকে, যার ফলে স্বাভাবিক চিন্তা করা বা বিশ্রাম নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”
তবে শুধু মস্তিষ্ক নয়, অতিরিক্ত চিন্তার প্রভাব পড়ে শরীরেও। ডা. ভাণ্ডারি জানান, ‘এই স্ট্রেস রেসপন্সের ফলে শরীরে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, হার্ট রেট ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, হজমপ্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শরীরে ক্লান্তি আসে।’
এই ধরনের উদ্বেগ এবং স্ট্রেস অনেক সময় এমন লক্ষণ তৈরি করতে পারে, যা গুরুতর শারীরিক রোগের মতো মনে হয়। যেমন—হাত-পায়ে ঝিনঝিন করা, বুকে চাপ অনুভব, মাথা ঘোরা এমনকি খিঁচুনির মতো উপসর্গ দেখা যেতে পারে—যার প্রকৃত কারণ মানসিক চাপ।
চিকিৎসক আরও জানান, ‘একজন তরুণ রোগী এসেছিলেন, যিনি হাতে-পায়ে ঝিনঝিন অনুভব করছিলেন এবং ভাবছিলেন তার নার্ভজনিত কোনো জটিলতা আছে। কিন্তু পরীক্ষায় কিছুই পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায়, অতিরিক্ত চিন্তার কারণে তার দেহে এই উপসর্গ দেখা দিয়েছে।’
তেমনই আরেক রোগী নিয়মিত খিঁচুনির মতো উপসর্গে ভুগছিলেন। পরে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি আসলে ছিল চরম মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনবেন অতিরিক্ত চিন্তা?
ভয়ের কিছু নেই—সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ওভারথিংকিং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ডা. ভাণ্ডারি জানান, ‘এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT)। এটি চিন্তার ধরণ পরিবর্তনে সহায়তা করে। পাশাপাশি, মাইন্ডফুলনেস, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, নিজের উদ্বেগগুলো লিখে রাখা, রাতে স্ক্রিন টাইম কমানো, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়াও উপকারী।’
ওভারথিংকিংকে যতটা ভয়াবহ মনে হয়, সঠিক সহায়তা পেলে এটি সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব।
দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি। কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।
রাকিব