
সংগৃহীত
ক্যান্সার—বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, ক্যান্সার যতটা হঠাৎ ধরা পড়ে বলে মনে হয়, বাস্তবে তা নয়। শরীর ক্যান্সার শুরুর প্রায় এক বছর আগেই বিভিন্ন ধরনের সতর্ক সংকেত পাঠাতে থাকে—যা অবহেলা করলেই বিপদ!
ইউকে-ভিত্তিক নতুন গবেষণার আলোকে ও একাধিক গবেষণা, জার্নাল যেমন The Lancet Oncology এবং BMJ সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে যে, ডায়াগনোসিসের প্রায় ৮-১২ মাস আগেই কিছু রোগী নানা অসামঞ্জস্যপূর্ণ উপসর্গের মুখোমুখি হন—যেমন অকারণে ওজন হ্রাস, দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, হজমের সমস্যা বা রাতের ঘাম।
রক্তের পরিবর্তন:
- কোনো উপসর্গ ছাড়াই রক্তে হালকা রকম অস্বাভাবিকতা (যেমন, হিমোগ্লোবিন হ্রাস, সাদা রক্তকণিকার পরিবর্তন) দেখা যেতে পারে, যা কিছু ধরনের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
হজমে সমস্যা:
- দীর্ঘমেয়াদি অম্বল, বদহজম বা পেটের ব্যথা (বিশেষ করে প্যানক্রিয়াস বা পাকস্থলীর ক্যান্সারে) কয়েক মাস বা এক বছর আগেই শুরু হতে পারে।
ওজন হ্রাস:
- অযথা ওজন কমে যাওয়া বা ক্ষুধা কমে যাওয়া শরীরে কোনো বড় সমস্যা, বিশেষ করে ক্যান্সারের সূচনাপর্ব নির্দেশ করতে পারে।
অসাধারণ ক্লান্তি বা দুর্বলতা:
- ঘুম, বিশ্রাম বা খাবার খাওয়ার পরেও ক্লান্তি না কমা—বিশেষ করে রক্তাল্পতা ছাড়া ক্লান্তি হলে সেটা কোলন ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে।
ত্বকে পরিবর্তন:
- ত্বকে হঠাৎ দাগ, মোল বা কালো চিহ্ন বড় হয়ে যাওয়া (স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনা), বা চোখের সাদা অংশে হলদে ভাব (লিভার সমস্যা) ইত্যাদি লক্ষণ শরীরের ভেতরের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘাম বা রাতে ঘাম:
- রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া (night sweats) বা অস্বাভাবিক জ্বর (বিশেষ করে টিউমার থেকে সৃষ্ট) অনেক সময় লিম্ফোমার পূর্ব সংকেত।
গবেষকেরা বলছেন, অনেক সময় রক্ত পরীক্ষা বা ইউরিন টেস্টেও সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন ধরা পড়ে, যা পরবর্তীতে ক্যান্সার হিসেবে ধরা পড়ে।
উপসর্গ যেগুলোর দিকে নজর দেওয়া জরুরি:
- অকারণে ওজন হ্রাস
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা
- দীর্ঘদিন ধরে চলা হজমের সমস্যা বা বুক জ্বালা
- রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম বা জ্বর
- ত্বকে অস্বাভাবিক দাগ, মোল বড় হয়ে যাওয়া
- বাত বা পেশিতে ব্যথা যেটি সহজে সারছে না
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উপসর্গগুলো যে সবসময় ক্যান্সারের ইঙ্গিত, তা নয়; তবে অবহেলা করাও ঠিক নয়।
ভবিষ্যতের প্রযুক্তি আশা দিচ্ছে ,স্বিডিশ গবেষকরা সম্প্রতি একটি রক্ত পরীক্ষার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যেটি রক্তের "শর্করার ধরণ" বা glycosaminoglycan পরিমাপ করে ১৪ ধরনের ক্যান্সার প্রথম ধাপেই শনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও আগেভাগেই ক্যান্সার ধরা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন চিকিৎসকেরা।
ক্যান্সার ‘নীরব ঘাতক’, কিন্তু নীরব নয়। শরীর সময় থাকতেই সতর্ক করে, শুধু আমাদের সেই সংকেত বুঝতে শিখতে হবে। প্রাথমিক উপসর্গগুলোকে গুরুত্ব দিন, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আগেভাগে সচেতনতা মানেই—জীবনের নিরাপত্তা!
হ্যাপী