ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

নীরব মহামারী! হু হু করে এই অসুখেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, সিগারেট-মদ না খেয়েও সর্বনাশ!

প্রকাশিত: ২০:০৬, ৩০ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:০৮, ৩০ জুন ২০২৫

নীরব মহামারী! হু হু করে এই অসুখেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, সিগারেট-মদ না খেয়েও সর্বনাশ!

ছবিঃ সংগৃহীত

এ যেন এক নীরব মহামারী। লিভারের রোগ—বিশেষ করে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ—নেই কোনো তেমন উচ্চারণ, নেই আলোড়ন, অথচ প্রতি বছর নিঃশব্দেই হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। ভারতের মতো দেশে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৬৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে লিভারজনিত রোগে। এ সংখ্যা ছুঁই ছুঁই করছে ৩ লাখের কোঠা। বাংলাদেশেও এই রোগে মারা যাওয়ার সংখ্যা কম নয়।

চিকিৎসকদের মতে, এই বাড়বাড়ন্ত শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বরং সমাজের জন্য এক বড় হুমকি হয়ে উঠছে। এতদিন ধারণা ছিল, লিভারের অসুখ মূলত মদ্যপানকারী বা ধূমপায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমান চিত্র বলছে ভিন্ন কথা—অ্যালকোহল না খেয়েও বহু তরুণ-তরুণী ও মধ্যবয়সী প্রাপ্তবয়স্ক ফ্যাটি লিভার, সিরোসিসসহ বিভিন্ন লিভারজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

কেন বাড়ছে লিভারের অসুখ?

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD), যাকে এখন বলা হচ্ছে MASLD (Metabolic dysfunction-associated steatotic liver disease)—এই অসুখে লিভারে চর্বি জমা হতে হতে তা লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাকে বিঘ্নিত করে।

চিকিৎসকদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে কয়েকটি মূল কারণ:

🔸 ভুল খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টিজাতীয় পানীয় (কোলা, এনার্জি ড্রিংকস)
🔸 বসে-বসে কাজ: দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে শরীরের ইনটেক করা ক্যালরি ক্ষয় হয় না
🔸 কায়িক পরিশ্রমের অভাব
🔸 স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল
🔸 মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব

এগুলো একত্রে লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং ধীরে ধীরে অসুখের জন্ম দেয়।

কী করা যায় প্রতিরোধে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের লিভারের সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, যদি কিছু অভ্যাস বদলানো যায়:

✅ প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট শরীরচর্চা
✅ খাবারে বেশি করে শাকসবজি, ফল, হোল গ্রেন
চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে দেওয়া
✅ পর্যাপ্ত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম
✅ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখা

ফ্যাটি লিভার বা MASLD আজ আর শুধু মদ্যপানের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি এক ভয়াবহ জীবনযাপন-নির্ভর ব্যাধি যা ধীরে ধীরে মহামারীর রূপ নিচ্ছে। সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যপরীক্ষার মাধ্যমেই এই ‘নীরব ঘাতক’-কে রোখা সম্ভব।

ইমরান

×