
ছবি: সংগৃহীত
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেখানে শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না, ফলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। এই রোগ সাধারণত আজীবন স্থায়ী হয় এবং পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য নয়, তবে ওষুধ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা জানতে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা, তবে ডায়াবেটিস কিছু প্রধান উপসর্গও তৈরি করে, যেগুলোর মধ্যে অনেক উপসর্গ রাতের বেলায় বেশি দেখা যায়। আসুন বিস্তারিত জেনে নিই।
কেন রাতের বেলায় ডায়াবেটিসের উপসর্গ দেখা দেয়?
ডায়াবেটিস আক্রান্তরা রাতে রক্তের শর্করার মাত্রা অত্যধিক কম (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা অত্যধিক বেশি (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) হতে পারে। উভয় অবস্থা বিপজ্জনক এবং চিকিৎসার প্রয়োজন। নিচে এই দুটি অবস্থার লক্ষণগুলো বিস্তারিত দেওয়া হলো।
রাতে দেখা দেওয়া সাধারণ উপসর্গসমূহ
রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া (রাত্রীকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া)
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঘুমের সময় ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার থেকে নিচে নেমে গেলে এই অবস্থা ঘটে (ব্যক্তিভেদে পরিবর্তন হতে পারে)। যারা ইনসুলিন বা ডায়াবেটিসের কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো অনুভব করতে পারেন:
-
ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া: ভেজা জামা পড়ে ঘুম থেকে জাগা।
-
দুঃস্বপ্ন দেখা: শর্করার কমে যাওয়ার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত বা জটিল স্বপ্ন দেখা।
-
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খুব ক্লান্ত লাগা: খুব কষ্টে মনোযোগ দেওয়া বা জ্বালাপোড়া বোধ।
-
হাত বা শরীর কাঁপা: মাঝে মাঝে রাতের বেলা দেহ কাঁপতে পারে।
-
দ্রুত হৃদস্পন্দন: হৃৎপিণ্ড দ্রুত স্পন্দিত হতে পারে।
-
ক্ষুধা বা বমির অনুভূতি: রাতের বেলা হঠাৎ ক্ষুধা বা বমি ভাব হতে পারে।
রাতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)
রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সাধারণ এবং ঘুমে বিঘ্ন ঘটায়।
লক্ষণগুলো হলো:
-
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া: উচ্চ গ্লুকোজের কারণে কিডনি বেশি কাজ করে এবং রাতে বারবার প্রস্রাব করার জন্য ঘুম ভেঙে যায়।
-
অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও মুখে শুকনো ভাব: রাতে খুব তৃষ্ণা অনুভব ও গলা শুকিয়ে যাওয়া।
-
মাথাব্যথা: ঘুম থেকে ওঠার সময় মাথাব্যথা হওয়া।
-
খারাপ ঘুমের গুণগত মান: ঘুমাতে কষ্ট হওয়া বা ঘুমে বারবার জাগা।
-
চোখ ঝাপসা দেখা: উচ্চ গ্লুকোজের কারণে দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
-
বমি ভাব বা ক্লান্তি: রাতে বা সকালে ক্লান্তি বা বমি ভাব অনুভব।
রাতের বেলা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে দেরিতে খাওয়া, যথেষ্ট ইনসুলিন না নেওয়া, বা প্রাকৃতিক শরীরের প্রক্রিয়া যেমন “ডন ফেনোমেনন” যেখানে সকালে শরীর গ্লুকোজ মুক্তি দেয়।
অন্যান্য লক্ষণসমূহ
-
অতিরিক্ত ঘাম হওয়া: ডায়াবেটিস ঘামের গ্রন্থি অতিসক্রিয় হতে পারে, ফলে রাতে ঘাম ঝরে।
-
হাত-পায় সুঁই ঢুকে যাওয়ার অনুভূতি: ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুর ক্ষতি থেকে এ ধরনের জ্বালা বা ঝিনঝিনি অনুভূতি হতে পারে।
-
ত্বকে শুষ্কতা বা খুশকি: রক্ত সঞ্চালনের দুর্বলতা ও পানিশূন্যতার কারণে ত্বকে সমস্যা হতে পারে যা ঘুমে বিরক্ত করে।
কেন রাতে ডায়াবেটিসের উপসর্গ গুরুত্বপূর্ণ?
-
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, ফলে দিনের বেলা ঘুম আসে ও মনোযোগ কমে যায়।
-
রাতের বেলা বারবার শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
-
ঘুমের মান খারাপ হলে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ আরো খারাপ হয়।
রাতে যদি উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে কী করবেন?
-
রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন: শোবার আগে এবং রাতে সম্ভব হলে রক্তের গ্লুকোজ মাপুন।
-
খাদ্যাভ্যাস ও ওষুধের ডোজ নিয়ম করুন: শোবার আগে ভারি খাবার বা বেশি কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ওষুধ যথা সময়ে নিন।
-
হাইপোগ্লাইসেমিয়া মোকাবেলা: দ্রুত কাজ করা গ্লুকোজ (যেমন রস বা গ্লুকোজ ট্যাবলেট) হাতের কাছে রাখুন।
-
ঘুমের অভ্যাস উন্নত করুন: নিয়মিত ঘুমের সময় মেনে চলুন এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন।
-
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি রাতে উপসর্গ বারবার হয়, তবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
রাতে ডায়াবেটিসের লক্ষণ বুঝে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত পরীক্ষা ও সঠিক যত্নেই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
আবির