
ছবি: সংগৃহীত
কিডনির আকার ছোট হলেও এর কাজ অনেক বড় — শরীরের বর্জ্য ছেঁকে ফেলা, তরলের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা। কিন্তু হার্ট বা লিভারের যতটা যত্ন নেওয়া হয়, কিডনিকে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমেই অনেক সময় কিডনি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে পাথর কিংবা কিডনি ফেলিওরের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। নিচে এমন ৭টি খাবার নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর — এবং তার স্বাস্থ্যকর বিকল্প কী হতে পারে, সেটিও তুলে ধরা হয়েছে।
অতিরিক্ত লবণ
অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অনেকেই প্রতিদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নির্ধারিত মাত্রা ৫ গ্রামের চেয়ে বেশি লবণ গ্রহণ করেন। আচার, পাপড়, প্যাকেটজাত খাবার এমনকি বাসার রান্নাতেও লবণের পরিমাণ বেশি হয়।
ভালো বিকল্প: জিরা, আদা, লেবুর রস, রসুন কিংবা স্বল্পমাত্রায় সিন্দা লবণ দিয়ে স্বাদ আনা যায়, তাতে সোডিয়ামের ঝুঁকি থাকে না।
প্রসেসড ও প্যাকেটজাত খাবার
ইনস্ট্যান্ট নুডলস, চিপস, ফ্রোজেন স্ন্যাকস বা রেডি-টু-ইট কারির মতো খাবারে থাকে অতিরিক্ত লবণ, সংরক্ষক ও ক্ষতিকর চর্বি, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ক্ষতি করে।
ভালো বিকল্প: মৌসুমী শাকসবজি, ডাল, এবং পূর্ণ শস্য দিয়ে ঘরে তৈরি খাবার। ঘরোয়া হেলদি স্ন্যাকস যেমন—ভাজা ছোলা, চিড়া চিভড়া বা বেকড মাখানা স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু।
কোল্ড ড্রিংক ও সফট ড্রিংকস
সফট ড্রিংকসে অতিরিক্ত চিনি ও ফসফেট থাকে, যা কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়, ক্যালসিয়াম বিপাক ব্যাহত করে এবং কিডনিকে অপ্রয়োজনীয় চাপ দেয়। বিশেষ করে কোলাতে থাকা ফসফরিক অ্যাসিড খুবই ক্ষতিকর।
ভালো বিকল্প: নিম্বু পানি, ছাচ, ডাবের পানি, আম পানা বা টাটকা ফলের রস কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়ক।
লাল মাংস
প্রোটিন জরুরি হলেও অতিরিক্ত লাল মাংস (যেমন খাসির মাংস) খেলে শরীরে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মতো বর্জ্য পদার্থ বেড়ে যায়। কিডনিকে এগুলো পরিষ্কার করতে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়।
ভালো বিকল্প: মুগ ডাল, রাজমা, ছোলা, পনির, টোফু কিংবা টক দই — প্রোটিন সরবরাহ করে কিন্তু কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে না।
অতিরিক্ত চিনি
অতিরিক্ত চিনি খেলে ডায়াবেটিস হতে পারে, যা কিডনি রোগের প্রধান কারণ। লাড্ডু, গুলাব জামুন বা হালুয়ার মতো মিষ্টি ঘন ঘন খেলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়।
ভালো বিকল্প: খেজুর, গুড় (পরিমিত পরিমাণে), আম, চি্কু, কাঁচকলা বা নিজ হাতে তৈরি কম চিনি যুক্ত মিষ্টান্ন। রাগি ও বাজরা ব্যবহার করেও স্বাস্থ্যকর ও মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়।
ডিপ ফ্রাই করা স্ন্যাকস
বারবার ব্যবহৃত তেল ও ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার শরীরে প্রদাহ, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে — যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। রাস্তার খাবার বা প্লাস্টিক প্যাকেটে বিক্রি হওয়া ভাজা খাবার বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
ভালো বিকল্প: সেদ্ধ বা গ্রিল করা স্ন্যাকস যেমন ধোকলা, ইডলি বা বেক করা সমুচা। এয়ার ফ্রায়ার ব্যবহার বা কম তেলে বাসায় রান্না করেও স্বাদ বজায় রাখা যায়।
অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকলেও অতিরিক্ত খাওয়ায় শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি তৈরি হয়। কিছু প্রক্রিয়াজাত চিজেও লবণ ও সংরক্ষক থাকে।
ভালো বিকল্প: লো-ফ্যাট দই, টোনড মিল্ক বা বাদাম/ওটসের দুধ। ক্যালসিয়ামের জন্য পালংশাক, রাগির মতো শাকসবজি দারুণ বিকল্প।
লিভার ডিটক্সে সহায়ক কিছু চা
লিভার পরিষ্কারে কোনো চা একাই জাদুকরী নয়, তবে কিছু চায়ে এমন উপাদান থাকে যা লিভারকে সুরক্ষা দিতে পারে।
-
গ্রিন টি: এতে থাকা ক্যাটেচিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
-
মিল্ক থিসেল টি: এতে থাকা সাইলিমেরিন লিভারের কোষ রক্ষা ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
-
হলুদের চা: এতে থাকা কারকিউমিন প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়।
আবির