
ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে ৭টি টিপস
ক্যান্সার কী
ক্যান্সার একটি জটিল রোগ, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে। এর সঠিক নির্ণয় করা চিকিৎসার প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি হলো ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি (ওঐঈ)।
এই পদ্ধতি কী, কীভাবে কাজ করে এবং কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে আমরা সাধারণ মানুষের জন্য সহজ ভাষায় আলোচনা করব।
ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি হলো এমন একটি পরীক্ষা, যা ক্যান্সার কোষের ধরন এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি বিশেষ ধরনের ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, যেখানে টিস্যু নমুনা (যেমন, বায়োপসি থেকে নেওয়া কোষ) পরীক্ষা করে ক্যান্সারের ধরন এবং তার আচরণ সম্পর্কে জানা যায়। এই পদ্ধতিতে কিছু বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ (অ্যান্টিবডি) ব্যবহার করা হয়, যা ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট প্রোটিনের সঙ্গে মিলে যায়। এই প্রোটিনগুলো ক্যান্সারের ধরন এবং এর চিকিৎসার সম্ভাবনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।
সহজভাবে বললে, ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি হলো ক্যান্সার কোষের একটি “ফিঙ্গারপ্রিন্ট” তৈরি করার পদ্ধতি, যা ডাক্তারদের বুঝতে সাহায্য করে যে এটি কোন ধরনের ক্যান্সার এবং কীভাবে এর চিকিৎসা করা উচিত।
কীভাবে কাজ করে?
ধরা যাক, একজন রোগীর ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়েছে। এখন ডাক্তারদের জানতে হবে এটি ফুসফুসের ক্যান্সার নাকি অন্য কোথাও থেকে ছড়িয়ে আসা ক্যান্সার। এই ক্ষেত্রে বায়োপসি করে টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়, যেখানে ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি পরীক্ষা করা হয়।
এই পরীক্ষায় নমুনায় বিশেষ রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করা হয়, যা কোষের নির্দিষ্ট প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এরপর মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে এই প্রোটিনগুলো পরীক্ষা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ফুসফুসের ক্যান্সারে ঞঞঋ১ নামক একটি প্রোটিন সাধারণত পাওয়া যায়, যা নিশ্চিত করে যে ক্যান্সারটি ফুসফুস থেকেই শুরু হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন প্রোটিন পরীক্ষা করে ক্যান্সারের ধরন, এর উৎস এবং চিকিৎসার সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয়।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি ক্যান্সার নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি:
১. সঠিক নির্ণয় নিশ্চিত করে: এটি ক্যান্সারের ধরন এবং উৎস নির্ধারণ করে, যা চিকিৎসার পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
২. চিকিৎসার দিকনির্দেশনা দেয়: কিছু ক্যান্সারে নির্দিষ্ট প্রোটিন থাকে, যেগুলোর উপর ভিত্তি করে বিশেষ ওষুধ (টার্গেটেড থেরাপি) দেওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, অখক প্রোটিন পাওয়া গেলে নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর।
৩. ইমিউনোথেরাপির সম্ভাবনা নির্ধারণ করে: চউ-খ১ নামক প্রোটিনের উপস্থিতি দেখে বোঝা যায় যে রোগীর ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি কার্যকর হবে কিনা।
৪. রোগের ভবিষ্যৎ আচরণ বোঝায়: এটি ক্যান্সার কতটা আক্রমণাত্মক বা কত দ্রুত ছড়াতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়।
সাধারণ মানুষের জন্য এর উপকারিতা
ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি শুধু ডাক্তারদের জন্য নয়, রোগীদের জন্যও আশীর্বাদ। এটি নিশ্চিত করে যে রোগী সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন। ভুল নির্ণয়ের কারণে অনেক সময় রোগী অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেন বা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। এই পদ্ধতি সেই ঝুঁকি কমায়। এছাড়া, এটি চিকিৎসার খরচ এবং সময় বাঁচাতে সাহায্য করে, কারণ সঠিক নির্ণয়ের মাধ্যমে সঠিক ওষুধ বা থেরাপি দ্রুত শুরু করা যায়।
বাংলাদেশে এর প্রাপ্যতা
বাংলাদেশে বড় বড় হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি পরীক্ষা করা হয়। তবে এটি একটি বিশেষায়িত পরীক্ষা, তাই সব জায়গায় এর সুবিধা নাও থাকতে পারে। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য বড় শহরের হাসপাতালগুলোতে এই পরীক্ষা সাধারণত পাওয়া যায়। এটি একটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা হতে পারে, যা সবার জন্য সহজলভ্য নাও হতে পারে। তবে, এর উচ্চ মূল্য সত্ত্বেও এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থের যোগ্য, কারণ এটি সঠিক নির্ণয় এবং কার্যকর চিকিৎসার পথ প্রশস্ত করে, যা দীর্ঘমেয়াদে রোগীর জীবন বাঁচাতে এবং চিকিৎসার খরচ কমাতে সহায়ক। সরকারি হাসপাতালে এই সুবিধা বাড়ানো গেলে সাধারণ মানুষের জন্য এটি আরও সাশ্রয়ী হবে।
শেষ কথা
ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি ক্যান্সার নির্ণয়ে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এটি ক্যান্সারের সঠিক ধরন বুঝতে এবং সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণে ডাক্তারদের সহায়তা করে।
সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের জানা উচিত যে ক্যান্সার ধরা পড়লে এই ধরনের পরীক্ষা আমাদের জীবন বাঁচাতে পারে। তাই ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রির মতো আধুনিক পরীক্ষার বিষয়ে জানুন। সঠিক নির্ণয়ই হলো সঠিক চিকিৎসার প্রথম ধাপ। সবাই সচেতন হই ভালো থাকি।
লেখক : অধ্যাপক বিভাগীয় প্রধান (প্যাথলজি) সাবেক, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ একাডেমি অব প্যাথলজি, চিফ কনসালট্যান্ট (প্যাথলজি), আনোয়ারা মেডিকেল সার্ভিসেস,২২/এ, রোড নং ২, ধানমন্ডি, আ/এ ঢাকা। প্রয়োজনে:
০১৯৭১৫৩৪৩১৭, ০১৯৭১৫৩৪৩১৮