
ছবি: সংগৃহীত
প্রস্রাব চেপে রাখা অনেকের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, নিয়মিতভাবে প্রস্রাব চেপে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। গবেষণা ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রথলির পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়। এতে করে পরবর্তীতে মূত্রথলি অতিরিক্ত প্রসারিত হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কে প্রস্রাবের সংকেত ঠিকমতো পৌঁছায় না। ফলে সময়মতো প্রস্রাবের চাপ অনুভব না হওয়া, কিংবা অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাবের মতো বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
এছাড়া দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া জমে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটি থেকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই হতে পারে। ইউটিআই হলে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ, জ্বালাপোড়া ও ব্যথা অনুভূত হয়। কিছু ক্ষেত্রে অত্যধিক চাপের ফলে মূত্রথলি ফেটে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে— যদিও এটি খুবই বিরল।
এভাবে প্রস্রাব আটকে রাখলে 'ইউরিনারি রিটেনশন' অর্থাৎ মূত্র সম্পূর্ণরূপে নির্গত না হওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনিচ্ছাকৃত প্রস্রাব চলে আসার সমস্যাও হতে পারে। নিয়মিত এই অভ্যাসের কারণে মূত্রথলি বারবার অস্বাভাবিকভাবে প্রসারিত হতে থাকে, ফলে তার স্বাভাবিক সংকোচন ক্ষমতা লোপ পায়।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মূত্রথলি সাধারণত ৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলেও এটি ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। একজন মানুষের মূত্রথলি গড়ে ১ লিটার পর্যন্ত তরল ধারণ করতে পারে। সাধারণত মূত্রথলি অর্ধেক পরিমাণে পূর্ণ হলে এর প্রাচীরে থাকা রিসেপ্টরগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাতে শুরু করে। তখন প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হয়। সঠিক সময়ে মূত্রত্যাগ না করলে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
মূত্রনালির অভ্যন্তরে একটি পেশিযুক্ত ভাল্ব থাকে, যাকে বলা হয় ইন্টারনাল স্ফিঙ্কটার। এটি প্রস্রাব ধরে রাখে যতক্ষণ না আপনি তা স্বেচ্ছায় নির্গত করেন। তবে বেশি সময় প্রস্রাব আটকে রাখলে এই ভাল্ব ও অন্যান্য পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।
নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও গুরুতর হতে পারে। কারণ নারীদের মূত্রনালি পুরুষদের তুলনায় ছোট হওয়ায় বাইরের ব্যাকটেরিয়া সহজে মূত্রনালিতে প্রবেশ করতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যদি দিনে ৮ বারের বেশি প্রস্রাবের চাপ আসে, তাহলে তা 'ওভারঅ্যাকটিভ ব্লাডার' বা অতিসক্রিয় মূত্রথলি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সুতরাং শরীর যখনই সংকেত দেয়, তখনই মূত্রত্যাগ করা জরুরি। প্রস্রাব চেপে রাখাকে ছোটখাটো বিষয় হিসেবে নিলে ভবিষ্যতে তা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে।
মেহেদী