
ছবি: সংগৃহীত
চরম বিশৃঙ্খলা। পদপিষ্ট হয়ে মৃত অন্তত সাতজন। আহত বহু। তবু থামেনি বিজয় উৎসব। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামের বাইরে যখন স্বজনহারাদের আর্তনাদ, তখন ভিতরে আইপিএল ট্রফি হাতে উল্লাসে মত্ত বিরাট কোহলিরা। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পরও স্টেডিয়ামের ভেতরে শিল্পীর চোখ বন্ধ করে বেহালা বাজানোর দৃশ্য ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দীর্ঘদিন দগদগে হয়ে থাকতে পারে।
লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় সামলাতে বেঙ্গালুরু পুলিশ দিশেহারা হয়ে লাঠিচার্জ করতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তবু বন্ধ হয়নি উৎসব। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্টেডিয়ামের ভিতরে অনুষ্ঠান চলতেই থাকে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর টিম বাস জনসমুদ্র ঠেলে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। তার আগেই ঘটে বিপত্তি।
কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক লক্ষ মানুষ স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশের সংখ্যা অনেক কম ছিল। ফলে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের। স্টেডিয়ামের গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য মানুষ হুড়োহুড়ি করে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। শুরু হয় ছোটাছুটি। তাতেই ঘটে বিপর্যয়। পদপিষ্ট হয়ে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়। বহু মানুষ আহত হন। রাস্তার ওপরই CPR দিতে দেখা যায় অসুস্থদের।
এই দুর্ঘটনার পরও কীভাবে নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুষ্ঠান চালানো হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে। সূত্রের দাবি, দুর্ঘটনার খবর সম্ভবত কোহলিরা জানতেন না। তাঁদের আচরণে বা মুখাবয়বে তেমন কোনও উদ্বেগ দেখা যায়নি।
যখন কোহলিদের কর্নাটক বিধানসভায় সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ই চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। খবর পৌঁছাতেই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হন। তিনি বলেন, "বহু মানুষের ভিড় হয়েছে। সকলেই খুব আবেগপ্রবণ। পুরো রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। নিরাপত্তার জন্য আমরা ৫০০০ পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম। পুলিশ সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে।" তবে বিতর্ক এড়াতে পারেননি তিনি। কারণ চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে পৌঁছে মাঠের মঞ্চে কোহলিদের পাশে মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।
স্টেডিয়ামের বাইরে অ্যাম্বুলেন্সে আহতদের তোলার দৃশ্য চলাকালীন কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রীকে উদ্ধার কাজে তদারকি করতে দেখা যায়নি।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্টেডিয়ামের সামনে আরও ভিড় ঠেকাতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। স্টেডিয়ামে যাওয়ার প্রায় সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করা হয় স্টেডিয়ামগামী মেট্রো পরিষেবাও। কুব্বন পার্ক স্টেশন থেকে ড. বি. আর. আম্বেডকর বিধানসভা স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট থেকে।
বেঙ্গালুরু পুলিশের পক্ষ থেকে বুধবার সকালেই অনুরোধ করা হয়েছিল, যাঁদের কাছে স্টেডিয়ামের টিকিট বা পাস আছে, শুধুমাত্র তাঁরাই যেন আসেন। কিন্তু সেই অনুরোধ কেউই কানে তোলেননি।
শহীদ