ছবি: সংগৃহীত
আমরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই একা একা কথা বলে ফেলি কিংবা হেসে উঠি। সুখের স্মৃতি মনে পড়লে কিংবা মোবাইলে মজার চ্যাট করতে করতে এমনটা হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কখন এই একা একা কথা বলাটা ‘স্বাভাবিক’ থেকে বেরিয়ে ‘অস্বাভাবিক’ হয়ে যায়?
স্বাভাবিক যেসব পরিস্থিতিতে একা একা কথা বলা হয়:
- অতীতের কোনো আনন্দময় মুহূর্ত মনে পড়ে গেলে একা হেসে ফেলা
- আগামীকালের কোনো উপস্থাপনার প্রস্তুতি হিসেবে আয়নার সামনে নিজে নিজে বলার অনুশীলন
- কাউকে কিছু বলতে না পারার আক্ষেপে একা একা কথোপকথনের অনুকরণ
- বাচ্চাদের ইমাজিনারি খেলা, যেমন: বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলার ভান করা
এসব আচরণ একেবারেই স্বাভাবিক এবং মানসিক বিকাশ বা চাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায়ও হতে পারে।
কখন এটি রোগ বা মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে?
১. অবসেসিভ চিন্তা বা OCD:
একই চিন্তা মাথায় বারবার ঘুরতে থাকলে মানুষ একা একা সেই চিন্তা নিয়ে কথা বলতে শুরু করতে পারে।
রিউমিনেশন বা অনবরত নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা:
নিজের ভেতরের দুঃখ, রাগ, না বলা কথা একা একা বলে হালকা হওয়ার চেষ্টা – যদি তা খুব ঘন ঘন হয়, তবে সেটি প্যাথোলজিক্যাল হতে পারে।
ডে ড্রিমিং ও বাস্তবতাবিচ্যুতি:
কেউ কেউ কল্পনার জগতে নিজেকে খুব শক্তিশালী বা প্রভাবশালী ভাবেন এবং সেই কল্পনা বাস্তবের মতো প্রকাশ করেন মুখে মুখে।
স্কিজোফ্রেনিয়া বা মনোবিকৃতি:
এই রোগে কেউ কেউ কানে ‘আওয়াজ’ শুনতে পান যেটা অন্যরা শুনতে পান না। এই গায়েবী আওয়াজের সঙ্গে কথোপকথনের প্রতিক্রিয়ায় একা একা কথা বলেন। এটিকে বলে হ্যালুসিনেটরি বিহেভিয়ার।
সমাধান কী?
যদি একা একা কথা বলাটা আপনার সামাজিক, ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে সমস্যা তৈরি করে, তবে সেটা নিয়ে মনোবিদের সঙ্গে কথা বলা জরুরি।
স্কিজোফ্রেনিয়ার মতো রোগে ওষুধ ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
OCD বা রিউমিনেশন-এর ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং ও কখনো ওষুধ প্রয়োজন হয়।
যাঁরা কোনো কারণে মুখোমুখি কথা বলতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যাসারটিভ কমিউনিকেশন শেখা দরকার — কিভাবে মিষ্টি ভঙ্গিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন।
যারা সোশ্যাল অ্যানজাইটি ভোগেন, তারা আয়নার সামনে কথা বলার অনুশীলন করতে পারেন — এটা একেবারেই স্বাস্থ্যকর ও সহায়ক।
একা একা কথা বলাটা সবসময় মানসিক রোগের লক্ষণ নয়। বরং কখনো কখনো এটা চাপ কমানোর উপায়, চিন্তার চর্চা, আত্মপ্রস্তুতির কৌশল। তবে যদি এটি বারবার ঘটে, প্রসঙ্গহীনভাবে ঘটে বা জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে — তবে সেটি হতে পারে মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত। তাই পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজন হলে পরামর্শ নিন, নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন।
ফরিদ
