যে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক এখন ঘরেই পাওয়া যায়

আমাদের আশেপাশের অনেক সাধারণ উদ্ভিদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণ। তারই একটি হলো ‘নিম’ গাছ। বিশেষ করে নিম পাতা প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে বহু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একে ‘প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক’ বললেও ভুল হবে না।

নিম পাতার ঔষধি গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাংগাল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা শরীর ও ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

১. ত্বকের যত্নে নিম পাতা

নিম পাতা ত্বকের নানা সমস্যার জন্য কার্যকর। বিশেষ করে ব্রণ, ফোঁড়া, চুলকানি ও চর্মরোগে নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে চমৎকার ফল পাওয়া যায়।

২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

নিম পাতা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত নিম পাতার রস পান করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের উপকার হয়।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

নিম পাতায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) শক্তিশালী করে তোলে। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় যারা বারবার ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হন, তারা নিয়মিত নিম পাতা খেলে উপকার পেতে পারেন।

৪. দাঁতের যত্নে কার্যকর

নিমের ডাঁটি দিয়ে দাঁত মাজা বা নিম পাতা দিয়ে কুলি করলে দাঁতের ক্যাভিটি, মাড়ির রোগ ও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। অনেক টুথপেস্ট কোম্পানি এখন নিম-যুক্ত পণ্য তৈরি করছে।

৫. লিভার পরিষ্কার রাখে

নিম পাতার ডেটক্সিফায়িং গুণ রয়েছে। এটি লিভার পরিষ্কার রাখতে এবং রক্ত বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে।

৬. চুল ও খুশকির সমস্যায় উপকারী

নিম পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে মাথা ধুলে খুশকি ও স্ক্যাল্পের ইনফেকশন কমে যায়। এছাড়া এটি চুল পড়াও কমায়।

কীভাবে ব্যবহার করবেন?

• সিদ্ধ পানি: ৮-১০টি নিম পাতা ১ লিটার পানিতে সিদ্ধ করে ছেঁকে সেই পানি দিয়ে মুখ ধুতে বা গোসল করতে পারেন।

• রস খাওয়া: প্রতিদিন সকালে ১ চামচ নিম পাতার রস পান করলে শরীরের ভেতরের টক্সিন দূর হয়।

• পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার: ব্রণ বা ফোঁড়ার ওপর সরাসরি নিম পাতা বেটে লাগালে আরাম পাওয়া যায়।

সতর্কতা

যদিও নিম পাতা প্রাকৃতিক ও উপকারী, তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি খাওয়া নিষেধ। নিয়মিত ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।

একদিকে যখন মানুষ নানা রকম ব্যয়বহুল কেমিকেলযুক্ত ওষুধ ও প্রসাধনী ব্যবহার করছে, তখন ঘরেই সহজলভ্য একটি পাতা হতে পারে বহু সমস্যার সমাধান। নিম পাতা শুধু একটি গাছের অংশ নয়, এটি একটি প্রকৃতিক চিকিৎসাকেন্দ্র।