
ছবিঃ আল জাজিরা
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক প্রস্তাবকে কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন, তেহরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ করবে না। এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে তিনি নাকচ করে দেন, যা ইরানের দীর্ঘদিনের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চলমান বিরোধ মেটাতে প্রস্তাব করা হয়েছিল।
বুধবার এক ভাষণে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে, খামেনি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হচ্ছে ইরানের জ্বালানি স্বনির্ভরতার অন্যতম মূল চাবিকাঠি।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব আমাদের জাতীয় আত্মনির্ভরতা ও ‘আমরা পারি’ এই নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। স্বাধীনতা মানে আমেরিকা বা তার মিত্রদের সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
খামেনি আরও বলেন, “কেউ কেউ মনে করেন যুক্তিবাদ মানে আমেরিকার সামনে মাথানত করা—এটাই আসল যুক্তিবাদ নয়। ইরানের সমৃদ্ধকরণে হস্তক্ষেপের অধিকার আপনাদের নেই।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও মঙ্গলবার বলেন, তেহরান তার বৈজ্ঞানিক ও পারমাণবিক অধিকার থেকে সরে আসবে না, যদিও তারা পারমাণবিক অস্ত্র প্রত্যাখ্যান করে। তিনি অভিযোগ করেন, যারা ইরানকে দোষ দিচ্ছে, তারাই গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করছে।
এর আগে, রয়টার্স জানায়, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছে, কারণ এতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে তেহরানের দাবির প্রতি কোনো নমনীয়তা দেখানো হয়নি এবং ইরানের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়েছে।
তেহরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, এবং তারা পশ্চিমা শক্তিগুলোর অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আলোচক স্টিভ উইটকফ বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চান না তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা চালিয়ে যাক—এটি যুক্তরাষ্ট্রের “রেড লাইন”।
জাতিসংঘের একটি ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইরান গত তিন মাসে অস্ত্র ব্যবহারের উপযোগী ইউরেনিয়ামের স্তরের কাছাকাছি সমৃদ্ধকরণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। যদিও এটি এখনও ৯০ শতাংশের নিচে, যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন, তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সাধারণত ব্যবহৃত ৪ শতাংশের অনেক উপরে।
তবে ইরান এই প্রতিবেদনকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বর্তমানে ইরান মুদ্রার দরপতন, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষে আঞ্চলিক মিত্রদের ক্ষতি এবং পারমাণবিক স্থাপনায় সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কার মতো একাধিক সংকটে জর্জরিত।
নতুন পারমাণবিক চুক্তি ব্যর্থ হলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যেতে পারে—বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে।
সূত্র: আল জাজিরা
মুমু