
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আবারও পরিবেশ সুরক্ষার চেয়ে জ্বালানিখাতে উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম প্রাকৃতিক ভূখণ্ড আলাস্কাকে তেল উত্তোলন ও খননের জন্য খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সোমবার (৩ জুন) আলাস্কায় এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ডাগ বারগাম জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসনের জারি করা নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ-আলাস্কা (NPR-A) অঞ্চলে তেল উত্তোলন ও খনন কাজ পুনরায় চালু করা হচ্ছে। এটি প্রায় ২.৩ কোটি একর বিশাল একটি অঞ্চল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সরকারি মালিকানাধীন জমি।
বারগামের ভাষায়, “বাইডেন প্রশাসন যেখানে উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করেছে, সেখানে আমরা দেশীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে বদ্ধপরিকর। এখন আমেরিকার জ্বালানি স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।”
দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প "জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা" ঘোষণা করেন এবং একের পর এক নির্বাহী আদেশে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ছাড় দেওয়ার নীতি চালু করেন। তার স্লোগান ‘ড্রিল, বেবি, ড্রিল’ আবারও আলোচনায় আসে।
জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস রাইট এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “তেল উৎপাদনই আলাস্কার অর্থনীতির ইঞ্জিন, যা রাজ্যের ৯০ শতাংশ রাজস্বের যোগান দেয়।”
এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পরিবেশবাদী ও আদিবাসী সংগঠনগুলো। আলাস্কা উইল্ডারনেস লীগ–এর নির্বাহী পরিচালক ক্রিস্টেন মিলার বলেন, “আর্কটিক অঞ্চলের সবচেয়ে সংবেদনশীল পরিবেশে খননের অনুমতি দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বন্যপ্রাণী, স্থানীয় জনগণ ও জলবায়ুর ওপর চরম হুমকি তৈরি করছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু তেল মাফিয়াদের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রির আরেকটি লজ্জাজনক প্রচেষ্টা। এখানকার ভূমি কারিবু, পরিযায়ী পাখি এবং স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবিকা ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
আলাস্কার উত্তরে অবস্থিত এই অঞ্চলটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জরুরি জ্বালানি মজুতের জন্য নির্ধারিত করা হয়। ১৯৭৬ সালে কংগ্রেসের একটি আইনে একে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও, পরিবেশ সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তবে এবার যখন ফেডারেল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলো, তখন অনেকেই আশঙ্কা করছেন এটি আর্কটিক অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব সংকটে ফেলবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত করবে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের আগের মেয়াদে আর্কটিক ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ রিফিউজ (ANWR) তেল উত্তোলনের জন্য খুলে দেওয়া হলেও নিলামে তেমন কোনও আগ্রহ দেখা যায়নি। একাধিক পরিবেশবাদী সংগঠন সেই সময়ও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরণের সিদ্ধান্ত মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ হলেও, এর প্রভাব বৈশ্বিক জলবায়ু, আর্কটিক বন্যপ্রাণী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের ওপর গভীরভাবে পড়বে।
আঁখি