ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের আধুনিক চিকিৎসা

ডা. জাহেদ পারভেজ

প্রকাশিত: ২২:৩২, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের আধুনিক চিকিৎসা

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে চুল আবার প্রতিস্থাপনের নাম হলো হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট বা চুলের প্রতিস্থাপন

চুল ঝরে পড়ে টাক হলে পড়লে তা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে চুল আবার প্রতিস্থাপনের নাম হলো হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট বা চুলের প্রতিস্থাপন। এ পদ্ধতিতে মাথার এক অংশ থেকে চুল নিয়ে অন্য অংশে লাগিয়ে দেওয়া হয়। মাথার পেছন দিকে ও কানের দুপাশের অংশকে বলে পারমানেন্ট জোন। পারমানেন্ট জোনের চুল সাধারণত পড়ে না। মাথার সামনের অংশ হলো টেম্পোরারি জোন। এ অংশের চুল নানা কারণে ঝরে যায়। ট্রান্সপ্লান্টের সময় পারমানেন্ট জোন থেকে চুল বা ফলিকল তুলে টেম্পোরারি জোনে স্থাপন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এর আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা না করালে বিপওি ও ঘটে। 
চুল ঝরে পড়ার কারণ : খুব বেশি তেলতেলে খাবার খাওয়ার অভ্যাস, খুব বেশি মানসিক চাপ গ্রহণ, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, চুলের সঠিক পরিচর্যার অভাব ছাড়াও বংশে কারও চুল ঝরে পড়ার ইতিহাস থাকলে পরিবারের অন্যদের চুল পড়তে পারে। 
চুল প্রতিস্থাপন যাদের জন্য : টাক মাথা নিয়ে অনেকের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করে।বাইরে বের হতে লজ্জা পান, তারা এ চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া যে পুরুষের সামনের অংশের চুল পড়ে গেছে কিন্তু পেছনের অংশের চুল রয়ে গেছে; যে নারীর অতিরিক্ত চুল পড়া বা চুল পাতলা হয়ে গেছে; মাথার স্ক্যাল্পে আঘাত পেয়ে চুল পড়ে গেছে যাদের; যারা স্থায়ী টাক হয়েছে কিংবা টাক নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন যারা; পরচুলা ব্যবহারের কারণে যাদের মাথার ত্বকে ইনফেকশন হয়েছিল, তারা চুল প্রতিস্থাপন করে নিতে পারেন।
করতে পারবেন না যারা : যাদের দীর্ঘমেয়াদি ওষুধের কারণে চুল পড়ে গেছে বা কেমোথেরাপি দিতে হচ্ছে তারা এ চিকিৎসা নিতে পারবেন না। যাদের মাথার টাক পুরো মাথাজুড়ে, তারাও চুল প্রতিস্থাপন চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন না। এছাড়া ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার জন্য মাথার দুইপাশে বা অন্য জায়গায় চুল না থাকলে, আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পর মাথার ত্বকে পুরু ফাইব্রাস কেলয়ডের দাগ হয়েছে, তারা এ চিকিৎসা গ্রহণ করবেন না।
যেভাবে চুল প্রতিস্থাপন চিকিৎসা : মাথার ত্বক জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। মাথার যে অংশে চুল প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াটি করা হয়, সেটি অসাড় করতে স্থানীয় অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়।
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতি : ফলিকুলার ইউনিট ট্রান্সপ্লান্টেশনে সার্জন মাথার পেছন থেকে চুলসহ মাথার ত্বকের একটি অংশ কেটে ফেলেন বা কেটে নিয়ে আসেন। হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন মাথার ত্বকের এ অংশে প্রতিস্থাপন করে দেন। ফলিকুলার ইউনিট এক্সট্রাকশন পদ্ধতিতে মাথার পেছন থেকে চুলের ফলিকলগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে তুলে নিয়ে আসা হয়।

পরে চুল প্রতিস্থাপনের জায়গায় চুলগুলো স্থাপন করা হয়। এক সেশনে শত থেকে হাজার হাজার চুল প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিস্থাপিত চুলগুলো নিরাময় ও রক্ত শোষণের জন্য কিছুদিনের জন্য মাথার ত্বকে ব্যান্ডেজ করা হয়। পুরো পদ্ধতিতে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। অস্ত্রোপচারের বা চুল প্রতিস্থাপনের ১০ দিন পরে সেলাই সরানো হয় বা ব্যান্ডেজ খোলা হয়।
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের পর : হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের পর ক্ষত সারা ও ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। চুলের পুনঃবৃদ্ধি করতে ডাক্তাররা মিনোক্সিডিল, ফিনাস্টারাইড বা কিছুদিন পর থেকে পিআরপি থেরাপি দিয়ে থাকেন। হালকা ড্রেসিং করা হয়, যা প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হয়। প্রতিস্থাপন করা অংশে রোদ লাগানো যাবে না। নিয়মিত ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। চুল প্রতিস্থাপনের ৩ থেকে ৪ দিন পরে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে পারবেন।
সতর্কতা : তবে বিশেষজ্ঞ হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জনকে দিয়ে কাজটি করতে হবে। রোগীকে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করিয়ে নেওয়া ভালো। 

লেখক : সহকারী অধ্যাপক; ত্বক-চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার : ডা. জাহেদস অ্যান্ড হেয়ার স্কিনিক হাসপাতাল, গ্রিনরোড, পান্থপথ মোড়, পুলিশ বক্সের পাশেই, সাবামুন টাউয়ার লিফটের ৫, ঢাকা। প্রয়োজনে : ০১৫৬৭-৮৪৫-৪১৯; 
০১৭৩০-৭১৬-০৬০

×