চিকিৎসা ও যতœ
এ কথা ঠিক, চিকেনপক্স বা জলবসন্ত রোগের জন্য কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে চুলকানি কমিয়ে একটু আরাম দেয়া যেতে পারে এবং অতি মাত্রায় ছড়ায়ে যাওয়ার প্রবণতাকে রোধ করা যেতে পারে।
ব্যথা নিরোধক : যদি আপনার বাচ্চার গায়ে বেশি ব্যথা থাকে বা উচ্চতাপমাত্রায় ভুগতে থাকে তবে ব্যথা নিরোধক বড়ি বা সিরাপ প্যারাসিটামল দিতে হবে। আইকুপ্রোফেন না দেয়ায় ভাল কারণ- সেক্ষেত্রে ত্বকে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এ্যাজমা থাকলেও আইব্রুফেন দেয়া যাবে না, পেটের ব্যথা থাকলেও দেয়া যাবে না।
আপনি গর্ভবতী হলে এবং বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে
ব্যথার জন্য প্যারাসিটমলই উপযোগী ওষুধ। এ্যাসপিরিন বড়ি বসন্ত রোগে অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
গর্ভবতী মহিলা যদি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয় তবে তাঁকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে দ্রুত। এজন্য তাকে এন্টিভাইরাল-এ্যাসাইক্লোভির ও ইমিউনোগ্লোবিন দিতে হবে সত্তর।
পানি খাবেন বেশি করে : বেশি করে পানি পান করুন যাতে করে পানিশূন্যতা না থাকে। পানিশূন্যতা সুস্থতাকে বিঘœ করে। পানি মুখের ভেতর বসন্তজনিত ক্ষতকে আরামদায়ক করে তুলে।
লবণযুক্ত খাদ্য কম খাবেন
বেশি চুলকাবেন না : বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চুলকানোটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এক্ষেত্রে নখগুলো কেটে দিতে হবে। চুলকানি বেশি হলে লোশিওক্যালামিন ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্লোরাম ফেনিকল বড়ি বা সিরাপ (এভিল, হিস্টাল) চুলকানোর জন্য নিরাপদে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঢিলেঢালা পোশাক পরুন
ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরতে হবে, না অতি গরম না অতি ঠা-া পোশাক। ত্বকে যেন ঘর্ষণজনিত ক্ষত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ্যান্টিভাইরাল প্রদান : সাধারণত এ্যাসাইক্লোভির (এ্যান্টিভাইরাল) ওষুধ দেয়া হয় না। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দেয়া যেতে পারে।
১. বসন্ত আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাকে দেয়া যেতে পারে।
২. বয়স্ক মানুষ বসন্তে আক্রান্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
৩. নবজাতকের ক্ষেত্রে।
৪. যে সব মানুষের জন্মগত বা চিকিৎসাজনিত কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
৫. আদর্শগতভাবে এ্যাসাইক্লোভির গায়ে গুটি বের হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হয় এবং এক্ষেত্রে ফলাফল ভাল হয়। এ্যাসাইক্লোভির প্রদানে বসন্তের প্রকোপ কম হয় এবং ছড়ায় কম।
এ্যাসাইক্লোভির খেলে অবশ্যই পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন। কারণ এ্যাসাইক্লোভিরে বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
ইমিউনোগ্লোবিন চিকিৎসা
ইমিউনোগ্লোবিন হলো শারীরিকভাবে সুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে নেয়া এন্টিবডির সংবলিত তরল। এটা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয়। বসন্তের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হয় না বরং যাদের অনেক বেশি মারাত্মক বসন্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। যেমনÑ
* গর্ভবতী মহিলা, নবজাতক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে।
* গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে ইমিউনোগ্লোবিন প্রদানে নবজাতক ভয়াবহ আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।
* ইমিউনোগ্লোবিন বাজারে কম পাওয়া যায় এবং অপেক্ষাকৃত মূল্য বেশি, তাই বিশেষ ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির জন্য শুধু ইমিউনোগ্লোবিন ব্যবহার করা হয়।
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রগুলো হলোÑ
* বসন্ত রোগীর সঙ্গে অনেক মুখামুখি স্পর্শ।
* বসন্ত রোগীর সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির ১৫ মিনিটের বেশি অবস্থান।
* যদি কোন ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষাতে প্রমাণিত হয় যে, তার শরীরে বসন্ত রোগের এ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি তবেই ইমিউনোগ্লোবিন দেয়া যায়।
* নবজাতকের ক্ষেত্রে ইমিউনোগ্লোবিক পরীক্ষা ছাড়াই দেয়া যেতে পারে।
বসন্ত রোগীদের যখন গুটি বের হয় তখনই ছড়ায় বেশি, সংক্রমিত করে বেশি। শুকানোর সময় বরং ছড়ায় না। রোগীকে সাধারণত প্রথম গোটা বের হওয়ার পর থেকে প্রথম ৬ দিন অন্যদের থেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: