ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অমর প্রেমের সাক্ষী টেকনাফের ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ

ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ২৩ মে ২০২৫

অমর প্রেমের সাক্ষী টেকনাফের ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ

ছবি: জনকণ্ঠ

মাথিনের কূপ ভালোবাসার আকাশ এখানে অসীম নীল,  ডানা মেলে উড়ে যায় স্বপ্নের গাঙচিল।  স্নিগ্ধ সকাল, তার প্রতীক্ষায়, ক্লান্ত দুপুর থমকে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ  ভট্টাচার্যের জীবনে ঘটে যাওয়া(১৯২৩-১৯২৪) বিয়োগান্তক প্রেমকাহিনীর কালের সাক্ষী এই মাথিনের কূপ। জায়গাটি বেশ সুশীতল ছায়া ঘেরা মায়াময় হয়ে আজও দর্শকের নজর কেড়ে নেয়।

 

ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্য ও রাখাইন তরুণী মাথিনের অমর প্রেমের সাক্ষী। 
রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিন পুলিশ অফিসারকে ভালোবাসার উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন মৃত্যু। শত বছরের পুরোনো সেই প্রেম কাহিনি শুনলে বর্তমান প্রজন্মে যে কারো শরীর শিউরে উঠে। বিস্তারিত জানতে আমাদের চলে যেতে হবে বহু বছর পূর্বের সেই কাহিনীতে। কলকাতার সুদর্শন পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ বদলি হয়ে আসেন টেকনাফ থানায়। তার থাকার জন্য রেডি করা হয় থানার পাশেই আধাপাকা একটি কক্ষ।

প্রায় জনশূন্য  সেই সময় টেকনাফ থানায় তেমন কোনো কাজ না থাকলে ও দিনের বেলায় টেকনাফে বিভিন্ন প্রান্তরে ঘুরে বেড়াত এ পুলিশ কর্মকর্তা। সারাদিনের ঘুরাঘুরি শেষে যখন সন্ধ্যা নামত নিজের একাকিত্ব অনুভব করত পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ। ওই সময় পুরো টেকনাফের খাওয়ার পানি সরবরাহ হত টেকনাফ থানা সংলগ্ন পাত কুয়া থেকে। ধীরাজ থানার বারান্দায় বসে বসে দেখত পানি নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। পানি নিতে আসা এলাকার তরুণীদের মধ্যে হঠাৎ ধীরাজের দৃষ্টি কাড়ে রাখাইন এক তরুণী যার চেহারা ছিল বাঙালির মত। ধীরাজ ওই  রাখাইন  তরুণীর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মেয়েটি টেকনাফের জমিদার ওয়ানকিং  এর একমাত্র  কন্যা নাম মাথিন। ১৯৩৫ সাল ধীরাজ তার ব্যক্তিগত জীবনী নিয়ে যখন থানার দেওয়ালে ডায়েরিতে লিখে তখন তার অমর ভালোবাসার প্রকাশ পায়।

রাখাইন কন্যা মাথিন ও জানতে পারে পারে থানায় প্রতিদিন তার জন্য কেউ একজন অপেক্ষা করে।সেই সময় থেকেই টেকনাফ থানা সংলগ্ন পাত কূয়াটি মাথিনের কূপ নামে পরিচিত পায়। অমর ভালোবাসার নিদর্শন হিসেব টেকনাফের এই স্পটটি বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের  মনে দাগ কাটে ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। পুলিশ কর্মকর্তার এমন ভালোবাসার প্রকাশ দেখে একসময় রাখাইন তরুণী মাথিন ও ধীরাজের প্রেমে পড়ে যায়। এর কিছু দিনের মধ্যেই দুজনের প্রেমের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর দুজন সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার। প্রথমে মাথিনের বাবা রাজি না হলেও পরে মেয়ের মুখের দিকে থাকিয়ে রাজি হয়ে যায়। তার ই মধ্যে বিষয়টি ধীরাজের ব্রাহ্মণ বাবার কানে চলে যায়। ধীরাজের বাবা নিজেকে অসুস্থ দাবি করে জরুরি ভিত্তিতে তাকে কলকাতায় যেতে খবর পাঠাই। কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত মাথিনকে জানাই ধীরাজ ভট্টাচার্য। তবে মাথিন রাজি হয় না।অনেকটা বাধ্য হয়ে ধীরজ এক সন্ধ্যায় মাথিনের বারণ না শুনে কলকাতায় চলে আসে। ধীরাজের এইভাবে চলে যাওয়া সহজে মেনে নিতে পারে নি প্রেমিকা মাথিন। মনের মানুষকে হারিয়ে মাথিন খাওয়া দাওয়া ছেড়ে একসময় কঙ্কালে পরিণত হয়ে মৃত্যু বরন করে। 

পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্য ও রাখাইন তরুণী মাথিনের এই অমর প্রেমের সাক্ষী হিসেবে টেকনাফে দাঁড়িয়ে আছে কূপটি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণ তরুণীরা ছুটে আসে ভালোবাসার ঐতিহাসিক নিদর্শনটি দেখতে এসে তাদের স্মরণ করে।

×