ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

দেশের পরিবেশ রক্ষায় গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১৯:২২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দেশের পরিবেশ রক্ষায় গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগ

গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগে গাছের চারা রোপন

ভালো নেই পৃথিবী। ভালো নেই বিশ্ববাসী। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আর চাহিদা মেটানোর আকাঙ্খায় পরিবেশের উপর চরম অবহেলায় আমরা যে স্বার্থপর পৃথিবী গড়ে তুলেছি, সেখানে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে জলবায়ুর প্রভাবজনিত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। খরা-বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, তীব্র দাবদাহ, অতিবৃষ্টি, দাবানল, বজ্রপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে বেড়েই চলেছে বিশ্বব্যাপী প্রাণহানি আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। 

জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও)-এর তথ্য অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত ৫০ বছরে অন্তত ২০ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে যার ৯০ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঘটেছে। 

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দোষ স্বীকার। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে অবদান নগণ্য(বৈশ্বিক নির্গমনের ০.৪৭% এর কম) থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন,কৃষিশিল্প সহ সার্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। 

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতা প্রতিবছর ৩.৮-৫.৮ মিমি বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এই শতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ১২.৩৪%-১৭.৯৫% উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। অনুসন্ধানে আরও দেখা যায় যে ৫.৮%-৯.১% ধান উৎপাদন হ্রাসের জন্য শুধুমাত্র সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি দায়ী হবে।  

পরিবেশবিদদের মতে, প্রকৃতির ওপর মানুষের বিরূপ আচরণ বন্ধ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে জরুরীভাবে কার্যকরী কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সিএফসি নির্গত হয়- এমন যন্ত্রপাতির ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে, সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সন্ধান করতে হবে। বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন বাড়াতে হবে।

দেশের দারিদ্র বিমোচনে পাঁচ দশক ধরে সুপরিকল্পিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও নিয়েছে নানাবিধ উদ্যোগ। নোবেল বিজয়ী এই প্রতিষ্ঠানটির দারিদ্র বিমোচনের আঠারো সিদ্ধান্তের অন্যতম একটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে চারা রোপণের মৌসুমে পরিবেশ রক্ষা এবং নিজস্ব সম্পদ তৈরিতে যতটা সম্ভব চারা রোপণ করা। 

এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ২০২০ সালের জুন মাস থেকে গ্রামীণ ব্যাংক বৃক্ষ রোপণ কর্মসুচি শুরু করে এবং ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদ-এর নেতৃত্বে গ্রামীণ ব্যাংক সর্বপ্রথম দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করে।

একই বছর শেখ রাসেল দিবসে ৯৪ লক্ষ গাছের চারা লাগানো হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে ৭ কোটি ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪৪১টি ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। ২০২১-২০২২ সালে গ্রামীণ ব্যাংক দেশজুড়ে সর্বমোট ১৮ কোটি ৮৭ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৯টি গাছের চারা রোপণ করেছে।

চলতি বছর দেশব্যাপী ২০ কোটি গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে গ্রামীণ ব্যাংক।  ২০ জুন, প্রধান কার্যালয় চত্বরে চারা রোপণের মাধ্যমে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের আগষ্ট পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগে সারা দেশে ৩৪.৭১ কোটি গাছের চারা লাগানো হয়েছে। 

জাতীয় দিবসসমূহে (যেমন : বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস, শেখ রাসেল দিবস প্রভৃতি) বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক বরাবরই অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিকে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা, এরিয়া ও যোনাল অফিস এবং সদস্যদের বাড়ির আঙিনায় বৃক্ষরোপণের এ উদ্যোগ চলমান রাখা হয়েছে পুরো বছরব্যাপি। 

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও পরিবেশ রক্ষায় গ্রামীণ ব্যাংকের এক কোটিরও বেশি ঋণগ্রহীতাদের নিয়ে বৃক্ষরোপনের এই কর্মসূচি সামাজিক বনায়নের প্রতি আগ্রহের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে তৈরি করছে জনসচেতনতা। গ্রামীণ ব্যাংক আশা করে, বৃক্ষরোপণের এই কর্মসূচি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্ভাবনা কমিয়ে,ভবিষ্যত প্রজন্মকে উপহার দেবে সবুজের মাঝে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার নতুন এক পৃথিবী।

 

এস

×