ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষ্যবহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ‘জুলাই জাগরণী’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ৯ নভেম্বর ২০২৪

গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষ্যবহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ‘জুলাই জাগরণী’

শহীদ মিনারে জুলাই জাগরণী শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনে সানজিদা প্রমী

সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি উপস্থাপিত হলো বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বৈচিত্র্যময় আয়োজনে ভেসে বেড়ালো দেশাত্মবোধক থেকে উদ্দীপনামূলক গানের সুর। সেই সুরেলা শব্দধ্বনিতে উচ্চারিত হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ থেকে জাতীয় কবি নজরুলের গীতবাণী।  শুধু কি তাই? গাওয়া হয়েছে ফকিরি গান থেকে গাজীর গান। বাদ যায়নি ভাব-ভালোবাসার বারতাবহ গান। নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় প্রকাশিত  হয়েছে মুক্তির আকাক্সক্ষা। ছিল কবিতার দোলায়িত ছন্দের শিল্পিত উচ্চারণ। শিল্পের বহুমাত্রিকতাকে আলিঙ্গন করে পরিবেশিত হয়ছে মূকাভিনয়।  নতুন দিনের স্বপ্ন বোনা আয়োজনটির শিরোনাম ছিল জুলাই জাগরণী। শিল্পের আলোয় গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাগরিক কমিটি। 

আয়োজনের শুরুতেই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। এরপর মাকে লেখা গণঅভ্যুত্থানের শহীদ স্কুল ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠি পাঠ করা হয়। যে চিঠিতে লেখা ছিল  মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না ...। আন্দোলনে শরিক হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো আনাসের চিঠিটি পাঠ করেন নাজহাতুল তোয়া। চিঠি পাঠ শেষে গান নিয়ে মঞ্চে আসেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা প্রমী। এই শিল্পী গেয়ে শোনানÑ আমায় গেঁথে দাও না মাগো/একটি পলাশ ফুলের মালা/ আমি জনম জনম রাখব ধরে/ভাাই হারানোর জ্বালা ....।  এই শিল্পীর গাওয়া দ্বিতীয় গানের শিরোনাম ছিল ‘সেই রেললাইনের ধারে মেঠোপথটার পারে দাড়িয়ে’। কণ্ঠশিল্পী হিমেল শুনিয়েছেন ‘তোমার ঘরে বাস  করে কারা, ও মন জানো না’ ও ‘তোমারে দেখিবার মনে চায়’।  


বৈচিত্র্যময় আয়োজনে  আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহবুবুর রহমান টুনি। তিনি পাঠ করেন  রওশন আরা মুক্তার লেখা কবিতা ‘গোল্ডফিশের কান্না’  ও সেলিম রেজা নিউটনের  ‘রাজকীয় মুক্তির ছলনা’। আয়নাঘর শীর্ষক  মূকাভিনয় উপস্থাপন করেন সায়েম। ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে’ গানের সুরে নাচ করেন
অদ্রী।  গাজী কালুর গান শুনিয়েছেন    সাত্তার। জাহিদ আকতারের লেখা ‘নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠ’ কবিতাটি পাঠ করেন  দীপক। এর মাঝে বিশাল পর্দায় দেখানো গঅভ্যুত্থানে সংঘঠিত হত্যাকা-সহ নৃশংসতার ধারাভাষ্যময় তথ্যচিত্র এবং গণঅভ্যুত্থাননির্ভর গ্রাফিতি ও আলোকচিত্রসমূহ।   ফকিরি গান পরিবেবশন করেন গোলাপি ও আলেয়া। এছাড়া সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেন পারসা, র‌্যাপার তাকবীর হোসেন ও সেজান, সিনা হোসেন, আহমেদ সানি প্রমুখ। ছিল ব্যান্ডদল এফ মাইনর ও মাদলের পরিবেশনা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন,   দেশের মানুষ পুরনো, ব্যর্থ ও জালেম ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করে নতুন করে রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনর্গঠনের ডাক দিয়েছে। একটি সুসংহত  বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করাইআমাদের  প্রধান লক্ষ্য। এই রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সব ধরনের  বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং সাম্য  ও ইনসাফ কায়েমের পক্ষে।  এ লক্ষ্যে দল-মত-নির্বিশেষে বাংলাদেশপন্থী সকল শক্তির মিলনবিন্দু হতে চায় জাতীয় নাগরিক কমিটি। আমাদের এই লড়াই একদিকে সাংস্কৃতিক; অন্যদিকে রাজনৈতিক।  দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়  নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার লক্ষ্য সামনে  রেখে  আমরা নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করতে চাই। বাংলাদেশের ইতিহাসের তীব্রতম ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার ও স্মৃতি ধরে রাখার প্রয়াসের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সাংস্কৃতিক আয়োজন।

মনোয়ার/ রিয়াদ

×