ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

গানে গানে ছয় দশকে রুনা লায়লা

​​​​​​​সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২৩ জুন ২০২৪

গানে গানে ছয় দশকে রুনা লায়লা

রুনা লায়লা

আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া যে আমি এখনো গান গাইতে পারছি, সুর করতে পারছি। তার চেয়েও বড় কথা আমারই সংগীত জীবনের চলার পথের সফলতার ছয় দশক আমি নিজের চোখে উপভোগ করে যেতে পারছি। এটা যে কত বড় সৌভাগ্যের বিষয়, জীবনে কত বড় যে প্রাপ্তি তা আসলে ভাষায় প্রকাশের নয়। আমার বাবা, মা, আমার পরিবার আমাকে শুরু থেকেই ভীষণ সহযোগিতা করে এসেছে’-সংগীত জীবনের ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া সম্পর্কে কথা বলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সুরকার রুনা লায়লা।

মাত্র বারো বছর বয়সেজুগনুসিনেমারগুড়িয়া সি মুন্নি মেরি ভাইয়া কী পেয়ারিগানটি গাওয়ার মধ্যদিয়ে ১৯৬৪ সালের ২৪ জুন সিনেমার গানে পেশাগতভাবে মনোনিবেশ করেন বাংলাদেশের গর্ব রুনা লায়লা। গানটি লিখেছিলেন তিসনা মেরুতি, কম্পোজ করেছিলেন মানজুর। সেই হিসেবেই আজ তিনি পেশাগতভাবে তার সংগীত জীবনে ষাট বছর পূর্ণ করেছেন। এরপর পাকিস্তানের আরও বহু সিনেমায় রুনা লায়লা প্লে-ব্যাক করেছেন। যারমধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেহাম দোনো’, ‘রিশতা হ্যায় পেয়ার কা’, ‘কমান্ডার’, ‘আন্দালিব’, ‘নসীব আপনা আপনা’, ‘দিল অউর দুনিয়া’, ‘উমরাও জান আদা’, ‘আনমোল’, ‘নাদান’, ‘দিলরুবাসহ আরও বেশকিছু সিনেমায় তিনি প্লে-ব্যাক করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের আগেই রুনা লায়লা প্রথম বাংলাদেশের সিনেমায় প্লে-ব্যাক করেন ১৯৭০ সালের ২৯ মে মুক্তিপ্রাপ্ত নজরুল ইসলাম পরিচালিত সিনেমাস্বরলিপিতে। সিনেমারগানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখেগানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। গানটি লিখেছিলেন গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুর করেছিলেন সুবল দাস। গানে লিপসিং করেছিলেন চিত্রনায়িকা ববিতা। প্রথম প্লে-ব্যাকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেন রুনা লায়লা। বাংলাদেশের সিনেমার গানেও তার কণ্ঠের কদর বেড়ে যায়। এরপর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে এসে তিনি একে একে  ‘জীবন সাথী’, ‘টাকার খেলা’, ‘জিঘাংসা’, ‘আলো তুমি আলেয়া’, ‘লাভ ইন সিমলা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘কাজল রেখা’, ‘রং বেরং’, ‘দি রেইন’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘সুন্দরী’, ‘দি ফাদার’, ‘কসাই’, ‘দেবদাস’, ‘এক্সসিডেন্ট’, ‘চাঁদনী’, ‘দোলনা’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অন্ধপ্রেম’, ‘দোলা’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’, ‘পাঙ্কু জামাই’, ‘দুই দুয়ারীসহ আরও বহু সিনেমায় তিনি প্লে-ব্যাক করে শ্রোতা দর্শককে মুগ্ধ করেছেন।

বাংলা ভাষায় তার বহু আধুনিক জনপ্রিয় গানও রয়েছে। যারমধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য হচ্ছেযখন থামবে কোলাহল’, ‘পাখি খাঁচা ভেঙ্গে উড়ে গেলে’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর’, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম’, ‘প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যের আগে’, ‘ভাষার জন্য যারা দিয়ে গেছো প্রাণ’, ‘শেষ করোনা শুরুতে খেলাইত্যাদি।

রুনা লায়লাদি রেইন’, ‘জাদুর বাঁশি’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেবদাস’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’, ‘তুমি আসবে বলেসিনেমাতে প্লে-ব্যাকের জন্য সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

রুনা লায়লা জানান, এখনো তিনি নতুন নতুন গানের সুর করছেন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে। রুনা লায়লা হিন্দি সিনেমাতেও প্লে-ব্যাক করেছেন।এক সে বারকার এক’, ‘জান- বাহার’, ‘ইয়াদগার’, ‘ঘর দুয়ার’, ‘অগ্নিপথ’, ‘স্বপ্ন কা মন্দিরসহ আরও বেশকিছু সিনেমায় তিনি প্লে-ব্যাক করেছেন।দামাদাম মাসকালান্দারগানটি এর আগে বিভিন্ন শিল্পী গেয়েছেন। তবে ভারতে একটি অনুষ্ঠানে রুনা লায়লা গাওয়ার পর ভীষণ সাড়া পড়ে। তারপর থেকে যেন এই গান হয়ে উঠে রুনা লায়লারই গান। যখন যেখানে গিয়েছেন তিনি সেখানেই তাকে এই গান এবং সাধের লাউ গানটি গাইতেই হয়েছে। 

রুনা লায়লা বাংলাসহ হিন্দি, উর্দু, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পশতু, আরবি, পারসিয়ান, মালয়, নেপালি, জাপানি, ইতালীয়, স্প্যানিস, ফরাসি, ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অর্থাৎ ১৮টি ভাষায় গান গেয়েছেন। রুনা লায়লা গানে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিন শতেরও বেশি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

এদিকে আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় চ্যানেল আইতে অনন্যা রুমার প্রযোজনায় রুনা লায়লাকে সরাসরি বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রচার হবে। অনুষ্ঠানে ইমরান, ইউসুফ, লুইপা, ঝিলিক, কোনালসহ আরও বেশ কয়েকজন শিল্পী সংগীত পরিবেশন করবেন।

×