ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চলচ্চিত্রে নতুন যুগের সূচনা করেন গদার

আনন্দকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

চলচ্চিত্রে নতুন যুগের সূচনা করেন গদার

জঁ লুক গদারের ‘ব্রেথলেস’ সিনেমার দৃশ্য

আধুনিক সিনেমাকে স্তব্ধ করে চলে গেলেন ফরাসী-সুইস পরিচালক জঁ লুক গদার। গেল ১৩ সেপ্টেম্বর গদারের পরিবার সূত্রে তার মৃত্যু খবর নিশ্চিত করা হয়। বার্ধক্যজনিত নানা ব্যাধিতে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ৯১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ১৯৩০ সালের ৩ ডিসেম্বর জন্ম হয় গদারের। মাত্র চার বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডে চলে যান জঁ লুক গদার। জেনেভা লেকের ধারেই কেটেছে তার শৈশব এবং কৈশোর। যুদ্ধ পরবর্তী ফ্রান্সে ফিরে যান যুবক গোদার। সেখানেই প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পাস করেন তিনি। তার স্নাতকের বিষয় ছিল এ্যানথ্রোপলজি। কলেজ জীবনে থাকাকালীনই গদারের সিনেমা তৈরির প্রতি আকর্ষণ বাড়তে শুরু করে।

১৯৫০ সালে তিনি যোগদান করে ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘কাইয়ার দুই সিনেমা’ ক্লাবে। যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন পরিচালক ত্রুফো। ধীরে ধীরে তথ্যচিত্র তৈরি করতে শুরু করেন তিনি। গদারের তৈরি তথ্যচিত্রগুলিই পরবর্তীকালে ‘সিনেমা ভেরিতে’ মুভমেন্ট হিসেবে পরিচিতি পায়। এরপর কাইয়ার দুই সিনেমা ম্যাগাজিনটিতেও নিয়মিত লেখা শুরু করেন তিনি। জার্মান নাট্যকার বেথ্রোল ব্রেখট ছিলেন গদারের অনুপ্রেরণা। তার ‘এপিক থিয়েটার’ ফরম্যাটকেই চলচ্চিত্রের পর্দায় রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন গদার। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকাংশেই তিনি এ ক্ষেত্রে নিজস্ব আঙ্গিকে সফল হয়েছিলেন। ১৯৬০ সাল থেকে সিনে জগতে তার আত্মপ্রকাশ।

সে সময় থেকেই ফরাসী সিনেমা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। তার ছবি বিশ্ব সিনেমাকে এক নতুন আঙ্গিক উপহার দেয়। এমনটাই মনে করেন অধিকাংশ চলচ্চিত্র সমালোচক। ‘ব্রেথলেস’, ‘কন্টেম্পট’-এর মতো নিরীক্ষামূলক ছবিতে ফ্রান্সে ‘নিউ ওয়েভ’ বা নব্যধারার চলচ্চিত্রের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে প্রশংসিত পরিচালকদের মধ্যে একজন ছিলেন গদার। চলচ্চিত্রে নতুন যুগের সূচনা করেন গদার। তার বানানো একের পর এক ছবি ফরাসী চলচ্চিত্রের অচলায়তন ভেঙ্গে দিয়েছিল। চিরাচরিত পরিপাট্য, চিত্রায়নের ব্যাকরণকে ধাক্কা দিয়েছিল গোদারের হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরার কাজ। কুয়েন্টিন ট্যারেন্টিনো, বার্নার্ডো বার্তোলুচি, স্টিফেন স্পিলবার্গের মতো বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে গদার ছিলেন আইকন। তার তৈরি নতুন ধারার ছবিগুলিকে ‘আভা গার্ডে ফিল্ম’ হিসেবেই আখ্যা দেয়া হতো।

গোদারের তৈরি উল্লেখ্যযোগ্য ছবিগুলি হল, ‘এ্যা ওম্যান ইজ এ্যা ওম্যান’, ‘মাই লাইফ টু লিভ’, ‘দ্য লিটল সোলজার’, ‘লা চিনইজ’, ‘উইক-এন্ড’ ইত্যাদি। ২০১৮ সালে তার পরিচালিত একটি আভা গার্ডে সিনেমা ‘দ্য ইমেজ বুক’ পাম ডি’ওর পুরস্কার পায়। ৯০ বছরে পা-রেখে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা অস্কার পুরস্কারে মনোনীত হন। যদিও তিনি সেই পুরস্কার গ্রহণ করেননি। বলেছিলেন, ‘অস্কারে আমার কিছু যায় আসে না।’ তার তৈরি ‘ব্রেথলেস’ ‘কনটেমপ্ট’, ‘আলপাভাইল’ ছবিগুলি বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম নিদর্শন। তার মৃত্যুতে ফরাসী চলচ্চিত্র জগতে নক্ষত্রপতন হলো, বলাইবাহুল্য। গদারের নির্মিত ছবি ভারতীয় কালজয়ী পরিচালক মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায়কেও অনুপ্রাণিত করেছে। তার ফিল্ম টেকনিক, ক্যামেরার ব্যবহার মুগ্ধ করেছে তাদের। গদারকে নিয়ে লেখা বইতে সে কথার উল্লেখ করেছেন মৃণাল সেন।

 

×