ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

এদেশে নিরাপদে শিল্প সংস্কৃতি চর্চা করতে পারব কি না?

প্রকাশিত: ২০:২৯, ৯ নভেম্বর ২০২৪

এদেশে নিরাপদে শিল্প সংস্কৃতি চর্চা করতে পারব কি না?

মামুনুর রশীদে

গত ২ নভেম্বর ‘দেশ’ নাট্যদল প্রযোজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনীর মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয় । কারণ সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরবর্তীতে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়।

 

পরবর্তী সময়ে বিক্ষোভকারীরা আবার সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেন। এ ঘটনায় উদীচী, দেশ নাটক বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরা।

 

এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশদ্বারের সেই সমাবেশে শতাধিক নাট্যকর্মী অংশ নেন।

 

সমাবেশ চলাকালীন কয়েকজন লোক এসে পেছন থেকে ‘ডিম ছুড়ে’ মারে এবং নাট্যকর্মীদের ধাওয়া খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। সমাবেশে ডিম ছুড়ে মারার পর বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ২ বারের সাবেক চেয়ারম্যান নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সভা শেষ করব না। ভেতরে নাটক হবে, বাইরে আমরা পাহারা দেব। এই দুষ্কৃতিকারীদের দেখে ছাড়ব।’

 

এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয় নাট্যজন মামুনুর রশীদের সঙ্গে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী পরিষদের আহ্বায়ক জানান, গতকাল সবার বক্তব্য শেষে ছিলো আমার বক্তব্য। ঠিক তখনই ডিম, ইট, পাথর দিয়ে কয়েকজন আমাদের সমাবেশে হামলা করে। অনেকে আমাকে উদ্দেশ্য করে ডিম মারতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নাট্যকর্মীরা তাদের পাল্টা ধাওয়া দেয়। এরপর তারা ভেগে যায়। এরপর সেখানে আসে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী। আমাদের কর্মীরা যখন তাদের পাল্টা আক্রমণ করতে গেছে, তখন পুলিশ-আর্মি বাধা দেয়। দুই পক্ষেই শ্লোগান-পাল্টা শ্লোগান হচ্ছিলো। আসলে এরা একশ্রেণির মানুষ, যাদের মধ্যে কোনো শিল্পবোধ নেই, তারাই এর সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির ভেতরের লোকও রয়েছে। যারা মিলে নাটকের কাজ বন্ধ করতে চায়। যারা প্রগতিশীল চিন্তার ধারক, যারা নাটক করে- তারাই ওদের টার্গেট। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসার আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। কয়েকজন দুষ্কৃতকারীকে আটক করে এরপর ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।

 

আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, নাটকের মানুষ এমন কী করেছে, দুষ্কৃতিকারীরা কারা, তাদের অভিযোগ কী, সংস্কৃতিকর্মীরা কী আওয়ামী লীগের দোসর, এদেশে নিরাপদে শিল্প সংস্কৃতি চর্চা করতে পারব কিনাসহ অসংখ্য প্রশ্ন তোলেন।

 

একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি। তাই অভিনয়ের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না হওয়া পর্যন্ত তারা আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এরপর জানানো হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত। সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি নাট্যকর্মীরা প্রশ্ন রাখেন- নাটকের মানুষ এমন কী করেছে? দুষ্কৃতকারীরা কারা? তাদের অভিযোগটা কী? সংস্কৃতিকর্মীরা কি আওয়ামী লীগের দোসর? এদেশে নিরাপদে শিল্প সংস্কৃতি চর্চা করতে পারব কি না?

শিহাব উদ্দিন

×