
নাটকের একটি দৃশ্য
প্রাচ্যনাটের ৪২তম প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অচলায়তন’ নাটক মঞ্চায়ন হবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টায়। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ও মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন প্রণোদনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম।
নির্দেশকের ভাষ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্ব নাটক, প্রতীকী নাটক নিয়ে বড় বড় সমালোচকদের যে অষ্পটতার অভিযোগ, তাকে খন্ডন করে আমাদের অচলায়তন মঞ্চায়নের প্রয়াস স্পষ্ট এবং প্রতীকের ব্যবহার যথার্থরূপে প্রকাশের ইচ্ছা কেবল।
অচলায়তন বিদ্যাপীঠকে আমরা কল্পনা করেছি একটি বালিকা বা নারী শিক্ষাগৃহ হিসেবে। আমাদের মতো পশ্চাৎপদ এবং ধর্মীয় সামাজিক চিন্তায় অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নারী। নারীকে কুসংস্কার আর নানা বিধি নিষেধের মধ্যে আটকে রাখার নানান ষড়যন্ত্র বিদ্যমান এবং কখনো কখনো সেই ষড়যন্ত্রে নারী নিজেও যেন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এই বিদ্যায়তনের সকল নিয়ম-কানুন এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বাইরের পৃথিবীর আলো-বাতাস বা মুক্তি চিন্তা কোনোভাবেই কোনো বিদ্যার্থীর ভাবনায় মননে স্থান না পায়। এখানে কাজের গতি মন্থর এবং যন্ত্রবৎ, যেন দম দেওয়া পুতুল সবাই। ঠিক উল্টো চিত্র অচলায়তনের বাইরের জগত, সেখানে কর্মমুখর সাধারণ মানুষ শোণপাংশু। তারা গতিশীল। কখনো জীবন গতির চেয়ে একধাপ আগানো তাদের চলন। আর দর্ভক যারা তারা কর্মে এবং ধর্মে নিবেদিত। দৃশ্যমান দুই বিপরীত গতির সম্মিলন ঘটানোর চেষ্টা আছে প্রযোজনায়। চরিত্ররা গতকালের বা আজকের, হতে পারে আগামীর।
মূল অচলায়তনের উগ্রবাদী দুষ্ট চরিত্র মহা পঞ্চকই যেমন দায়িত্ব পায় পুরনো ভাঙ্গা ভীতের ওপর নতুন যাত্রা শুরু করার। সে যেন ভিলেন থেকে নায়ক হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের কলমে। আমরা তার বিপ্রতীপ অবস্থানে গিয়েছি। আদৌ এই বিদ্যায়তনের বা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বাস্তব নিরীখে কতটুকু? আবার নিয়ম নীতি মন্ত্র বা প্রায়শ্চিত্তে মানবের মুক্তি আছে কি? নাকি এই শিক্ষার আমূল উৎপাটনেই একদিন তৈরি হবে সত্যিকারের শিক্ষা যা মানুষে মানুষে একাত্ম হওয়া, মুক্ত দুনিয়ার স্বপ্নে বিভোর করবে সবাইকে। আমাদের গুরু বা দাদা ঠাকুর না নারী না পুরুষ এবং মুক্তিদাতা, যে আমাদের সঙ্গে মিলতে চায়, সবার সঙ্গে যুক্ত থেকে খেলায় অংশগ্রহণ করতে চায়। আমরাও দেখতে চাই খেলতে খেলতে শিখতে পারি কিনা সত্যিকারের শিক্ষা।
নাটকটির বিভিন্ন চরিত্র রূপায়ন করছেন সানজিদা প্রীতি, শাহানা রহমান সুমি, শাহেদ আলী সুজন, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, শাখাওয়াত হোসেন রেজভী, জাহাঙ্গীর আলম, চেতনা রহমান ভাষা প্রমুখ।