ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিষয় : বিজ্ঞান ॥ অধ্যায় : অষ্টম মোঃ শাহজাহান

সপ্তম শ্রেণির লেখাপড়া

প্রকাশিত: ২১:২৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১

সপ্তম শ্রেণির লেখাপড়া

সিনিয়র শিক্ষক গভঃ টেকনিক্যাল হাই স্কুল, চাঁদপুর ১। শব্দ কী? উত্তর : শব্দ এক প্রকার শক্তি। যে শক্তির কারণে কানে শ্রবণের অনুভূতি জন্মায় তাকেই শব্দ বলে। শব্দের একক মিটার/সেকেন্ড। ২। শব্দের কিভাবে উৎপত্তি হয়? উত্তরঃ কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ উৎপন্ন হয়। কম্পনশীল বস্তু যে শব্দ সৃষ্টি করে তাহাই শব্দের উৎস। কোনো বস্তুর কম্পন যতক্ষণ স্থায়ী থাকে ততক্ষণ শব্দ শোনা যায়। কম্পন থেমে গেলে শব্দও আর শোনা যায় না। ৩। কম্পাঙ্ক কী? উত্তর ঃ কোনো বস্তু প্রতি সেকেন্ডে যতটা কম্পন সৃষ্টি করে তাকে ঐ বস্তুর কম্পাঙ্ক বলে। কম্পাঙ্কের একক হার্জ (ঐু). ৪। প্রতিধ্বনি কী? উত্তরঃ যখন কোন শব্দ মূল শব্দ থেকে আলাদা হয়ে মূল শব্দের পুনরাবৃত্তি করে, তখন ঐ প্রতিফলিত শব্দকে প্রতিধ্বনি বলে। ৫। শব্দের সঞ্চালন কী? উত্তরঃ শব্দের একস্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করাকে শব্দ সঞ্চালন বলে। কোনো মাধ্যম ছাড়া শব্দ এক অবস্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হতে পারে না। কেনো বাদ্যযন্ত্রের কম্পনশীল তার এদের চারপাশের বায়ুর অনুগুলোকে কম্পিত করে। বায়ুর এই কম্পিত অনুগুলো এদের কম্পনকে পার্শ্ববর্তী বায়ুর অনুগুলোতে স্থানান্তর করে দেয়। পর্যায়ক্রমে এভাবে শব্দ দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ৬। কঠিন পদার্থের শব্দের সঞ্চাল প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর। উত্তরঃ নিম্নের পরীক্ষণের মাধ্যমে কঠিন পদার্থের শব্দ সঞ্চালন বর্ণনা করা হলো। প্রয়োজনীয় উপকরণঃ একটি ধাতব স্কেল। পরীক্ষণ পদ্ধতিঃ স্কেলটির এক প্রান্ত আমার কানের সাথে ধরি। অন্য প্রান্তে আমার কোনো বন্ধুকে আস্তে আস্তে আঁচড় কাঁটতে বলি। পর্যবেক্ষনঃ আঁচড় কাঁটার শব্দ স্পষ্ট শোনা গেল। সিদ্ধান্তঃ কঠিন পদার্থের ভিতর দিয়ে শব্দ সঞ্চালিত হয়। ৭। তরল পদার্থের মধ্যে শব্দের সঞ্চালনের বর্ণনা দাও। উত্তরঃ নিম্নের পরীক্ষণের মাধ্যমে তরল পদার্থের শব্দ সঞ্চালন বর্ণনা দেয়া গেল। প্রয়োজনীয় উপকরণঃ একটি বেলুন, প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি। পরীক্ষণ পদ্ধতিঃ (i) প্রথমে বেলুনটিতে পানি ভর্তি করি। (ii) বেলুনের একদিক আমার কানের সাথে ধরি। (iii) বেলুনের অপরদিকে আস্তে করে আঁচড় কাঁটি। পর্যবেক্ষণঃ আচড় কাঁটার শব্দ স্পষ্ট শোনা গেল। সিদ্ধান্ত ঃ তরল পদার্থের ভিতর দিয়ে শব্দ সঞ্চালিত হয়। ৮। মাধ্যম ছাড়া শব্দ সঞ্চালিত হয় না তা একটি পরীক্ষণের মাধ্যমে বর্ণনা কর। উত্তরঃ চিত্র-৩ প্রয়োজনীয় উপকরণঃ একটি ঝুনঝুনি, একটি সরু তার কাঠি, একটি বড় মুখওয়ালা বোতল ও একটি কর্ক ইত্যাদি। পরীক্ষণ পদ্ধতিঃ (১) কাঠির এক মাথায় সুতা দিয়ে ঝুনঝুনিটিকে বাঁধি। (২) কাঠির অপর মাথাটি কর্কের ভিতরের মুখে ঢুকাই। (৩) পুরো ব্যবস্থাটিকে বোতলের ভিতর এমনভাবো ঢুকাই কর্কটি যেন ছিপির কাজ করে। (৪) ভালো করে ছিপিটি বন্ধ করে বোতলটিকে ঝাঁকাই। (৫) লক্ষ্য রাখি যেন ঝুনঝুনি বোতলের দেয়াল স্পর্শ না করে। বাইরে থেকে ঝুনঝুনির শব্দ শুনতে পেলাম। (৬) কর্কটিকে খুলে একটু উচু করে রেখে বোতলের নিচে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি দিয়ে তাপ দেই। (৭) গরমে বোতলের সব বাতাস বেরিয়ে গেলে বোতলেরি ছিপি বন্ধ করি। পর্যবেক্ষণঃ বোতলটি ঠান্ডা হওয়ার পর আবার ঝাঁকাই। কোনো শব্দ শুনতে পেলাম না। সিদ্ধান্তঃ উক্ত পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মাধ্যম ছাড়া শব্দ সঞ্চালিত হয় না। ৯। শব্দের বেগ কী? বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ লিখ। উত্তরঃ কোনো নির্দিষ্ট সময়ে শব্দ যে দুরত্ব অতিক্রম করে তাকে শব্দের বেগ বলে। শব্দের বেগ = বা, ঠ = শব্দের বেগের একক মিটার/সেকেন্ড। বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগঃ (i) বায়ুতে শব্দের বেগ ৩৪৩ মিটার/ সেকেন্ড। (ii) পানিতে শব্দের বেগ ১৪৯৬ মিটার/ সেকেন্ড। (iii) অ্যালুমিনিয়ামে শব্দের বেগ ৬৪২০ মিটার/ সেকেন্ড। বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দ বিভিন্ন বেগে সঞ্চালিত হয়। কঠিন মাধ্যমে শব্দ বায়ু ও তরল মাধ্যমের চেয়ে দ্রুত ও ভালোভাবে সঞ্চালিত হয়। আবার বায়ু মাধ্যমের চেয়ে দ্রæত ও ভালোভাবে তরল মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। ১০। প্রাণীরা কীভাবে শব্দ শুনতে পায়? উত্তরঃ মানুষ বা বিভিন্ন প্রাণীদের কানের বাইরের অংশের আকৃতি অনেকটা ফানেলের মতো। শব্দ যখন কানের ছিদ্রপথে যায় তখন শব্দের কম্পন কানের পর্দাকে কাঁপায়। পর্দা এই কম্পনকে কানের ভিতরের অংশে পৌঁছিয়ে দেয়। সেখান থেকে শব্দ প্রাণীদের মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এভাবে প্রাণীরা শব্দ শুনতে পায়। ১১। শ্রাব্যতা সীমা, শ্রুতি পূর্বশব্দ, শ্রæতি-উত্তর শব্দ কী? উত্তর ঃ শ্রাব্যতা সীমাঃ প্রতি সেকেন্ডে ২০ থেকে ২০০০ কম্পন সৃষ্টিকারী শব্দ মানুষ শুনতে পায়। তাই ২০ থেকে ২০০০ কম্পন সৃষ্ট শব্দকে শ্রাব্যতা সীমা বলে। শ্রæতিপূর্ব শব্দঃ যে শব্দ প্রতি সেকেন্ডে ২০টির কম কম্পন দিয়ে সৃষ্টি হয়, এ রকম শব্দ শ্রবণ উপযোগী নয়। এ রকম শব্দকে শ্রæতিপূর্ব শব্দ বলে। শ্রুতি-উত্তর শব্দঃ প্রতি সেকেন্ডে ২০,০০০ এর বেশি কম্পনের ফলে সৃষ্ট শব্দ শোনা যায় না। একে শ্রুতি উত্তর শব্দ বলে। ১২। সুশ্রাব্য শব্দ ও নয়েজ কী? উত্তর : সুশ্রাব্য শব্দঃ যে সকল শব্দ শুনতে ভালো লাগে, সুখকর ও আনন্দদায়ক এরূপ শব্দগুলোকে সুশ্রাব্য শব্দ বলে। যেমন গানের সুর, বাঁশির সুর, হারমোনিয়ামের শব্দ, সেতারের বাজনা ইত্যাদি সুশ্রাব্য শব্দ। নয়েজঃ যে সকল শব্দ শুনতে কষ্ট লাগে, যন্ত্রনাদায়ক ও বিরক্তিকর এরূপ শব্দগুলোকে নয়েজ বলে। যেমন পেরেক ঠোকার শব্দ, নির্মান কাজের শব্দ, মাইকের আওয়াজ ইত্যাদি হলো নয়েজ। ১৩। শব্দ দূষণ ও এর কারণ লিখ। উত্তরঃ বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন জোরালো এবং অপ্রয়োজনীয় শব্দ যখন মানুষের সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে বিরক্তি ঘটায় এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধণ করে তখন তাকে শব্দ দুষণ বলে। শব্দ দূষণের কারণঃ (i) আমাদের পরিবেশে অতিরিক্ত বা অবাঞ্চিত শব্দ। (ii) গাড়ি চলার শব্দ এবং গাড়িা হর্ণ বাজানোর শব্দ। (iii) বিস্ফোরণের শব্দ। (iv) মাইকের শব্দ (v) নির্মাণ কাজের শব্দ (vi) টেলিভিশন ও রেডিও জোরে বাজানোর শব্দ, (vii) রান্নাঘরের জিনিসপত্রের শব্দ। ১৪। শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব লিখ। উত্তর : আমাদের চারপাশের অতিরিক্ত শব্দ নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এগুলো হলো অনিদ্রা, মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, বিরক্তি, দুর্ভাবনা ইত্যাদি। কোন মানুষ অনেক দিন অতিরিক্ত জোরালো শব্দ শুনলে কানে কম শুনতে পাবে বা একবারে নাও শুনতে পারে। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মনোযোগ নষ্ট করে।
×