ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোলটেবিল বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান

প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

চলতি বছরেই দুই-তিনটি বড় কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসবে। এছাড়া বৈচিত্র আনতে শীঘ্রই চালু হচ্ছে সরকারী ট্রেজারি বন্ড এবং অক্টোবরে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (বিকল্প বাজার)। তখন শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি জিডিপিতে অবদান বাড়বে। এসব বন্ড ট্রেড শুরু করলে শেয়ারবাজার ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে আগামীতে আসছে ডেরিভেটিভ ও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেয়ারবাজার নিয়ে খুবই ইতিবাচক। তিনি শেয়ারবাজারের স্বার্থে সব ধরনের সহায়তা আশ্বাস দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
শনিবার হোটেল ওয়েস্টিনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজার : বর্তমান ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের ১৮টি বন্ধ কোম্পানি ইতোমধ্যে পুনরায় চালু হয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর ব্যাংকের যে ঋণ ছিল সেগুলো পরিশোধের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলো লাভবান হয়েছে। এছাড়াও এনবিআরও লাভবান হবে কারণ এখান থেকে বড় কর পাওয়া যাবে। তাই এনবিআরের সহযোগিতাও আমাদের প্রয়োজন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা যদি অন্য কোন দেশের সঙ্গে তুলনা করি, তখন অবশ্যই সেই দেশের সার্বিক অবস্থার দিকে তাকাতে হবে প্রথমেই। আমরা যদি ডেরিভেটিভ মার্কেটের কথা বলি, তাহলে লোকের বিষয়টা তো দেখতে হবে, কিন্তু আমাদের দেশে তো ডেরিভেটিভ মার্কেট সম্পর্কে কারও ভাল ধারণা নেই।
তিনি বলেন, আমাদের মিউচুয়াল ফান্ডের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই ভাল, তারা লভ্যাংশ দিতে শুরু করছে। না দিলে তাদের ডেকে কারণ দর্শাতে বলা হচ্ছে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কেবল বাংলাদেশী পণ্য না, বিদেশী পণ্য কেনাবেচা হবে। কৃষকের ধান উত্তোলনের আগেই এখানে কেনাবেচা হবে। এর সফটওয়্যার যদি কিনতে যাই, তাহলে প্রায় ১০০ থেকে দেড় শ’ কোটি টাকা লাগবে, আর একটু ভাল সফটওয়্যার যদি কিনতে চাই তাহলে লাগবে সোয়া ৪০০ কোটি টাকা। আমরা এত বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি, শীঘ্রই এগুলো শুরু হলে মার্কেটের সাইজ অনেক বাড়বে।
এ্যাসোসিয়েশন অব এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ এ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ) এর সভাপতি ড. হাসান ইমাম বলেছেন, এ্যাসোসিয়েশন থেকে এক বছরের মধ্যে অন্ততপক্ষে ২৫ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের আকার বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি এ্যাসেট ম্যানেজার পৃথকভাবে অবদান রাখবে। তিনি বলেন, গত ২ বছর মিউচুয়াল ফান্ডের পারফরমেন্স খুবই ভাল। বাংলাদেশ ফান্ড ম্যানেজাররা অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে নেই। তিনি বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে অন্ততপক্ষে এফডিআরের থেকে বেশি লভ্যাংশ দিতে বলেছিলেন। এ বছর প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ড এফডিআরের থেকে বেশি হারে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। যেখানে গড়ে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ৭ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

এটা আমাদের জন্য সুখবর। তিনি আরও বলেন, অনেকগুলো এ্যাসেট ম্যানেজমেন্টকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ্যাসেট ম্যানেজারদের এ্যাসেট বা ফান্ডের আকার কম। অথচ উন্নত দেশগুলোতে মানুষজন মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে। সেখানে শেয়ারবাজারকে লং টার্ম রিটার্নের প্রক্সি হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রভিডেন্ড ফান্ডগুলোকে আসার আহ্বান করলে তাদের সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। তারা সর্বোচ্চ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। যা মিউচুয়াল ফান্ড বড় হওয়ার পেছনে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করে।
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, বহুজাতিক প্রষ্ঠান ইউনিলিভার-নেসলে ভারপাস্তানের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রষ্ঠান। তারা বাংলাদেশে বহু বছর ধরে একক ব্যবসা করে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। তাদের শেয়ার ছেড়ে বাংলাদেশের মানুষকে মালিকানা দিতে হবে। শেয়ারবাজারের এ বিশ্লেষক বলেন, আমাদের বাজারে কয়টা ভাল কোম্পানি আছে। এখানে নেসলে, ইউনিলিভারের মতো কোম্পানি আসছে না। জাঙ্ক শেয়ার দিয়ে মূলত শেয়ারবাজার চালানো হচ্ছে। আমাদের বাজারে হতাশা এবং আশা দু’দিকই আছে। এই বাজারে ভাল কোম্পানি আনা দরকার হলেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব্যবধান কমিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, কর ছাড় নয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে বাধ্য করতে হবে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়েছিল। সমালোচনা হলেও ফ্লোর প্রাইসের কোন বিকল্প ছিল না।
গোলটেবিল বৈঠকে শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য জাহিদ হাসান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনূসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) ড. মোঃ এজাজুল ইসলাম, ড. মোহাম্মদ হেলাল, সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন ও ডিবিএর সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

×