ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঢাকা চেম্বার সভাপতি

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত না হলে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারিত হবে ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:২৮, ২১ মে ২০২৫

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত না হলে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারিত হবে ন

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) তাসকীন আহমেদ বলেছেন, নিরাপদ ও সহায়ক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত না হলে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারিত হবে না।
বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে উন্নত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার অত্যাবশ্যকীয়তা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাগত বক্তব্যে তাসকীন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্যোক্তারা অনিরাপদ পরিবেশ, চাঁদাবাজি, প্রতারণামূলক অনলাইন কার্যক্রম, পণ্য পরিবহন ঝুঁকি, জালিয়াতি প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ও বিনিয়োগে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। এমতাবস্থায় নির্বিঘেœ, স্বচ্ছভাবে ও নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার একটি সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার লক্ষ্যে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। দাবি আদায় গণতান্ত্রিক কার্যক্রমের অংশ হলেও, অর্থনীতির এ কঠিন সন্ধিক্ষণে ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি জনগণের দৈনন্দিন কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
ডিসিসিআইর প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুস সালাম বলেন, আমরা কিভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করব, তা নিয়ে চিন্তিত, ব্যবসায়ীরা নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করলেও বর্তমানে আনাকাক্সিক্ষত ভীতকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়।
ডিসিসিআইর প্রাক্তন সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় পার্কিং সুবিধা বাড়নোর পাশাপাশি দক্ষিণের ট্রাফিক বিভাগের অফিস শান্তিনগর থেকে গুলিস্তানে স্থানান্তরের সুপারিশ করেন। তিনি বৈদ্যুতিক ব্যাটারি চালিত রিক্সাগুলোকে ঢাকা শহরের বাইরে স্থানান্তরিত করারও সুপারিশ করেন, সেই সঙ্গে অতিদ্রুত ঢাকা শহরের পরিবহনের কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরও দাবি জানান।

বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থতির পট পরিবর্তনের পর আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেন, স্থল বন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া করতে গিয়ে ব্যবসায় ব্যয় বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে মৌলভীবাজার এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড থাকায় বাবুবাজার ব্রিজে প্রচ- যানজট হচ্ছে, ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. আবুল হাসেম, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হলেও চিনির ওপর সরকারের অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপের ফলে চিনির মূল্য যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যবসাীদের ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট, তাই তিনি সরকারকে ট্যাক্স কমানোর আহ্বান জানান। সরকারের ১৪টি চিনিকল থাকলেও উৎপাদিত চিনি দিয়ে মোট চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ মেটানো যায়, এছাড়াও বেসরকারিখাতে চিনিকল রয়েছে মাত্র ৩টি। এখাতের পাইলট প্রকল্পের আওতায় সরকারের অন্তত ২টি চিনিকল সারাবছর চালানো উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী সৈয়দ মোহাম্মদ বশির উদ্দিন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পুলিশ বাহিনীর সদস্যবৃন্দ এখনও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে না। চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানিকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে, অবৈধ মজুতদারি বন্ধ হবে এবং এ ধরনের পণ্যের মূল্য হ্রাস পাবে।
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি নেসার উদ্দিন খান বলেন, কিশোর গ্যাং-এর নৈরাজ্যে এখন জনজীবনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যা প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশ মনিহারি বণিক সমিতির সহ-সভাপতি হাজী ফয়েজউদ্দিন বলেন, পুরান ঢাকায় প্রবেশের রাস্তাগুলো বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচির কারণে বন্ধ থাকায় চকবাজারসহ অন্যান্য জায়গায় পণ্যবাহী ট্রাক যেতে পারছে না, ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে না। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হলেও চকবাজার, মৌলভীবাজার এলাকায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় প্রতিনিয়ত যানজট অসহনীয় হয়ে পড়ছে, যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লুৎফুর রহমান বাবু বলেন, মোহাম্মদপুরের আইন—শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে, এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এছাড়াও তিনি মোহাম্মদপুর এলাকায় ফুটপাতগুলো হতে  অবৈধ দখল উচ্ছেদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
ধামরাই ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, ঢাকা শহেরর আশপাশে ৩৭০টি ইটভাঁটি থাকলেও, সরকার ইটভাঁটির লাইসেন্স নবায়নের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এ খাতের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, বিষয়টির দ্রুত সুরাহা কামনা করেন। ডিসিসিআই পরিচালক এনামুল হক পাটোয়ারী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট সেক্টহোল্ডারদের মধ্যকার সমন্বয় সভা, এ বিষয়ে সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ফুটপাতে ভাসমান দোকান উচ্ছেদের প্রস্তাব করেন।
মতিঝিল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মহায়মেনুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তবে আরও উন্নতি করতে হবে। তিনি সম্মতি জ্ঞাপন করেন যে, এখনো বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

×