অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ
আগামী রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে টিসিবির জন্য কেনা হচ্ছে ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি ও ছোলার মতো পণ্য। ইতোমধ্যে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এসব পণ্য আমদানিতে অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়েছে। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না। এজন্য আগেভাগেই নিত্যপণ্য আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, সার এবং এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। এছাড়া শীঘ্রই রমজানে বেশি ব্যবহার হয় খেজুর আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই চারটি নিত্যপণ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রোজার সময় ছোলা ও সয়াবিনের চাহিদা বেড়ে যাবে, সেই চিন্তা থেকেই সরকার আগেভাগে আমদানির অনুমতি দিয়েছে। চিনি, ছোলা ও সয়াবিন আমদানি করবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। শীঘ্রই খেজুর আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
সার্বিকভাবে আর্থিক দুরবস্থা থাকলেও সরকার কোনোভাবেই চায় না সাধারণ মানুষের কষ্ট হোক, সেজন্য এই সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে পাঁচ হাজার টন চিনি ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। প্রতিকেজি ১২০ টাকা ৯২ পয়সা দরে মোট ৬০ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় এই চিনি কেনা হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন ছোলা ক্রয়ের প্রস্তব অনুমোদিত হয়েছে। প্রতি কেজি ১০৭ টাকা ৩৯ পয়সা দরে মোট ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৪০ হাজার টাকায় এই ছোলা কেনা হবে।
স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১৬৩ টাকা ১৫ পয়সা দরে ৩২ লাখ ৬০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। মোট ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ১৮ লাখ ৬৫৯ হাজার টাকা। মোট আটটি প্রস্তাব বৈঠকে উত্থাপিত হয়। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাইরে সার ও এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। দেশে দুই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সম্প্রতি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকার বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস করেছে। সেই সঙ্গে বাজারে যেন ঘাটতি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে চিনি, ছোলা ও সয়াবিন আমদানির সিদ্ধান্ত নিল।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে (১২-১৩ নভেম্বর ২০২৪ সময়ে ৩১তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। সূত্রটি জানায়, পেট্রোবাংলা ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে।
৩টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে দর প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সেলারেট এনার্জি এলপি, ইউএসএ-এর কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৪.৫৫ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কিনতে ব্যয় হবে ৬৮৬ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার ২০০ টাকা।