ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অর্থনীতিতে তিন সমস্যা দেখছে সিপিডি

​​​​​​​অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:১৬, ৫ মে ২০২৪

অর্থনীতিতে তিন সমস্যা দেখছে সিপিডি

.

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের অর্থনীতিতে এখন যোগ সমস্যা হয়েছে অর্থাৎ তিনটি সমস্যা যুক্ত হয়েছে। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এটি এখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলেছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে। ঋণ শুধু বিদেশী ঋণ না, অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি খাতের ঋণের দায়দেনাও বাড়ছে। তৃতীয়ত, দেশের প্রবৃদ্ধির হার শ্লথগতির হয়ে পড়েছে।

এটি হয়েছে কর আহরণ কম হওয়ার কারণে, খাত না বেড়ে আরও সংকুচিত হয়েছে। রবিবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিতজনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা : নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট জনমানুষের প্রত্যাশাশীর্ষক বাজেট প্রস্তাবনায় এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

. দেবপ্রিয় বলেন, মূল্যস্ফীতি বিরূপভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে। ফলে বাল্যবিয়েও বাড়ছে। বিশ্বে মূল্যস্ফীতির পতন ঘটেছে, কিন্তু দেশে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। জিডিপিতে ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে সুনাম ছিল আমরা কখনো খেলাপি হই না, সে সুনাম আর থাকছে না। ইতোমধ্যে আমরা বিলিয়ন ডলারের দেনা এখনো আমরা দিতে পারছি না। আমাদের গর্বের জায়গায় চিড় ধরেছে। জিডিপিতে সরকারি ঋণ ৩৭ শতাংশ, ব্যক্তি খাতের ঋণ শতাংশ- সব মিলিয়ে ৪২ শতাংশ ঋণের বোঝা আছে সরকারের। জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, সরকার ত্রৈমাসিক জিডিপির তথ্য দিচ্ছে। তাতে যা দেখা যাচ্ছে, গড় প্রবৃদ্ধি শতাংশ, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে বাকি সময়ে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি করতে হবে- যা প্রায় অসম্ভব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাজেট প্রত্যাশা নিয়ে জরিপ করেছে সিপিডি। এতে আড়াই হাজারের ওপর অংশগ্রহণকারী ছিল। জরিপের তথ্য তুলে ধরেছেন অর্থনীতিবিদ। জরিপের তথ্য তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, ৬৪ শতাংশ বলেছে তাদের কোনো বাজেট প্রত্যাশা নেই। এতে তিনটি বিষয় পরিষ্কার। তারা শোভন কর্মসংস্থান চায়, মানসম্মত শিক্ষা চায়, সম্প্রসারিত সামাজিক সুরক্ষা চায়। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, পিছিয়ে পড়া মানুষের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করতে হবে। আর স্বাধীন মিডিয়া বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। জরিপের বেশিরভাগ মানুষ বলছেন, স্বচ্ছতার জন্য পেনশন ফান্ডকে আলাদা করতে হবে, সামাজিক সুরক্ষায় যোগ করা যাবে না।

বাজেটে মৌলিক অধিকার সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ না বাড়লে বাংলাদেশের আগামীর লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে, কিন্তু মানুষের বেতন বাড়ছে না। তাতে কিন্তু নতুন দরিদ্র তৈরি হচ্ছে। এবারের বাজেটের লক্ষ্য হবে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্ত করা যায়। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে মান্ষুকে আরও যুক্ত করতে হবে।

 ভৌত কাঠামোগত উন্নয়নে খরচ করলেও বেশি জরুরি এখন মানবসম্পদ রক্ষায় খরচ করতে হবে। তা না হলে আমরা যেখানে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চাই, সেখানে নিয়ে যেতে পারব না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন দুর্বলতা থাকলে সরকারকে তা স্বীকার করে নিতে হবে বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, আমরা একটা উন্নয়নশীল দেশ। ফলে দুর্বলতা থাকবে। কিন্তু সেই দুর্বলতা স্বীকার না করলে তা কাটানো যাবে না। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাজেটকে আমরা জনগণের বলি। কিন্তু জনগণের সম্পৃক্ততা বাজেটে থাকে না। বর্তমানে কিছু পেশাজীবী বা ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে সভা করে সরকার। কিন্তু তাতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয় না। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিতে হবে। বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করেছেন এখন বাজেট নিয়ে আলোচনা করলে তা কি বাজেটে যুক্ত হওয়ার সময় আছে। মানুষের অভিব্যক্তি দেখলেই বোঝা যায় বাজেট নিয়ে মানুষের কোনো প্রত্যাশা নেই। প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির যে বিশাল ফারাক তা, এই গবেষণায় উঠে এসেছে। তাই মানুষ সরকারের ওপর প্রত্যাশা করতেও ভুলে যাচ্ছে।

এনজিওগুলোর অর্থছাড়ে জটিলতায় প্রচুর অর্থ বাংলাদেশ থেকে বাতিল হয়ে উগান্ডায় চলে গেছে বলে দাবি করেন রাশেদা। তিনি বলেন, এনজিওগুলোর অর্থছাড় দিতে মাসের পর মাস লাগে। এই অর্থগুলো মানবসম্পদ উন্নয়নে এসেছিল। কিন্তু এজেন্সি বা এসবির ক্লিয়ারেন্সের জন্য এসব অর্থ আটকে থাকে। এখানে এসব এজেন্সির কাজ কী- আমি বুঝি না। মূলধারার শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে এই শিক্ষার্থীরা। কেউ যাচ্ছে মাদ্রাসায়, কেউ যাচ্ছে লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে। এজন্য শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সকল শিক্ষা মাধ্যমকে একটি আইনের মধ্যে আনতে হবে।

জনগণের প্রত্যাশা না থাকলেও দাবি ঠিকই আছে বলে মনে করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান। সভায় তিনি বলেন, যে টাকায় বাজেট বরাদ্দ হবে, তা কিন্তু আমার টাকা, জনগণের টাকা। সামষ্টিক অর্থনীতি, রাজনীতি বা দেশ কীভাবে চলবে, সেই দাবিগুলো কিন্তু এই জরিপে উঠে এসেছে। সভায় সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম মান্নান গ্রামীণ শহুরে মানুষের চাহিদা ভিন্ন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গ্রামে মানুষ একটা ভালো রাস্তা চায়। স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি সেবা চান। কয়েক বছর আগেও যেখানে বিদ্যুৎ ছিল না, তারা এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। তারা এখন দাবি করছে টেকসই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের। গ্রামীণ মানুষদের এসব দাবি, তাদের চাহিদাকেও বাজেটে গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।   

×