ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

অর্থনীতির ধারণা প্রথম দিয়েছিলেন যিনি

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

অর্থনীতির ধারণা প্রথম দিয়েছিলেন যিনি

অর্থনীতির জনক কে? প্রশ্নটি করা হলে আমরা এক বাক্যে উত্তর দেব এ্যাডাম স্মিথ। ব্রিটিশ এই লোকটিকেই আধুনিক অর্থনীতির জনক বলা হয়। এটা নিয়ে প্রথম দ্বিমত পাওয়া যায় ১৯৫৪ সালে যোসেপ স্কাপপিটারের লেখা ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঊপড়হড়সরপ অহধষুংরং, বইতে। তার মতে অর্থনীতির ইতিহাসে বেশ বড়সড় ফাঁকফোকর আছে এবং মূলধারার বইগুলোতে কিছু ইতিহাস এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে ইকোনমিক্সের প্রকাশ করা একটি রিপোর্টে ইবনে খালদুনের নামের এক আরবীয় পণ্ডিতের কথা জোরেশোরে তুলে ধরা হয়। এই ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনার কারণ হলো তিনি এ্যাডাম স্মিথের রূপরেখাই ৬০০ বছর আগে অর্থাৎ ১৪ শতকেই দিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়টা আরবদের জ্ঞানচর্চার স্বর্ণযুগ ছিল। তবে ইবনে খালদুনের সব থেকে বড়গুণ ছিল প্রথাগত গণ্ডির বাইরে গিয়েও কিছু চিন্তা করার ক্ষমতা। পূর্বসূরিদের অনেক চিন্তাধারাকে খালদুন একেবারে ছুড়ে ফেলে দেন। ১৪ শ’ শতকে খালদুন যে ধরনের চিন্তা-ভাবনা করে গিয়েছিলেন সেটা এখনকার অর্থনীতিবিদদের বিব্রত করতে পারে। অনেকাংশেই আধুনিক অর্থনীতিবিদদের মতো ছিল তার চিন্তাধারা। এ্যাডাম স্মিথের একটি দারুণ তত্ত্ব হলো শ্রমবিভাগ। একটি শার্ট একা তৈরি না করে কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগ করে নেয়া। যেমন কেউ শুধু কাপড় কাটবে আবার কারও কাজ শুধু সেলাই করা। উৎপাদনের কাজ অনেক গতি লাভ করে শ্রমবিভাগের ফলে। খালদুন মধ্যযুগেই হুবুহু ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে কোন সভ্য সমাজের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে শ্রম বিভাগ। আর এটা যে শুধু দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয় বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিস্তৃত। উদাহারণ হিসেবে বলা যায় বোয়িং বিমানের সব যন্ত্রাংশ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয় না। বোয়িং ৮৭৮ ড্রিমলাইনারের ইঞ্জিন আসে যুক্তরাজ্যের রোলস রয়েলস থেকে, পাখা তৈরি হয় জাপানে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শ্রমবিভাগের দারুণ উদাহারণ ড্রিমলাইনার। এ্যাডাম স্মিথের শ্রমবিভাগের উদাহারণ হিসেবে একটি পিন তৈরিতে ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করতে হয়। একা একজন শ্রমিক দিনে ২০টি পিন উৎপাদনে সক্ষম। কারখানায় ১০ জন শ্রমিক কাজ করলে এবং প্রত্যেকে একা একাই ১৮টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পিন উৎপাদন করলে, একদিনে ২০০টি পিন উৎপাদিত হয়। কিন্তু যথাযথ শ্রমবণ্টন এই সংখ্যাটাকে নিয়ে যায় ৪ হাজার ৮০০ তে! খালদুন কাঠ থেকে চেয়ার টেবিল নির্মাণ করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই শ্রমবিভাগ বর্ণনা করেছিলেন। কাঠ কাটার জন্য একজন, কাঠে খোদাই করার জন্য একজন, টুকরোগুলোকে রং করার জন্য একজন রংমিস্ত্রি এবং সবশেষে সব টুকরোগুলোকে জোড়া দেয়ার জন্য একজন শ্রমিক। শ্রমবিভাগ বর্ণনা করাই কিন্তু ইবেন খালদুনের একমাত্র কৃতিত্ব নয়। চাহিদা ও যোগান এর মধ্যকার সম্পর্ক, প্রান্তিক উপযোগ এবং উৎপাদন ব্যয় নিয়েও খালদুন বেশ কিছু ধারণা দিয়েছিলেন যেগুলো আলফ্রেড মার্শালের তত্তের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি অর্থনীতিকে ৩ ভাগে ভাগ করেন। উৎপাদন, বাণিজ্য, পাবলিক গুড। বিলাসী পণ্যে বাড়তি কর আদায়ের প্রয়োজনীয়তা এবং অতিরিক্ত কর যে রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিতে পারে সেটিও উল্লেখ করেন তিনি। পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেয়ার কারণে এ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক এই বিষয়ে দ্বিমত নেই বললেই চলে। তবে খালদুন যে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন এটাও যেন স্বীকার করতেই হবে।
×