ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২০২৩-২৪ অর্থবছর

ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ১ জুন ২০২৩

ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

গত অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা

গত অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে নতুন অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকার গত অর্থবছরের চেয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে তার প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে। কারণ, ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ঋণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সরকার টাকা ছাপিয়ে মেটায়। টাকা ছাপালে তখন বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায় এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ে। 
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি পূরণ করতেই দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হয়। দেশের মধ্যে ব্যাংক-ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্রই ঋণের হচ্ছে প্রধান উৎস। আর বিদেশ থেকে ঋণের ক্ষেত্রে উৎস হচ্ছে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। আগামী অর্থবছরে বিদেশী উৎস থেকে সরকার ১ লাখ ২০০০ কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়ার চিন্তা করছে, গত অর্থবছরের জন্য এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। গত ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল ১৩ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। একই সময়ে গত অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৩৯ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১০ মে পর্যন্ত ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৭৮ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই নেওয়া হয়েছে ৬৭ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। দেশী উৎস থেকে নেওয়া ঋণ বাড়লেও কমে গেছে বিদেশী উৎস থেকে নেওয়া ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশী ঋণ পাওয়া গেছে ৪০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪৮ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এদিকে গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি প্রায় নেতিবাচক। অথচ গত অর্থবছরে সরকার ধরে নিয়েছিল, এ খাত থেকে নিট ৩৫ হাজার কোটি টাকা আসবে। গত বছরের সংশোধিত বাজেটে তারপরও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাবে বলে আশা করছে। নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির নেতিবাচক চিত্রের কারণে জুন শেষে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ৯ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চিত্র ৪ হাজার কোটি টাকা নেতিবাচক। 
অর্থাৎ এ সময়ে সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে বরং সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে মানুষ টাকা তুলে নিয়েছেন বেশি। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের বেশি ঋণ নেওয়া দুই কারণে খারাপ। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায়। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিলে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে, যার ভুক্তভোগী হন ভোক্তারা অর্থাৎ সাধারণ মানুষ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে, পুরো অর্থবছরে তা নেওয়া হলে মূল্যস্ফীতির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।

×