
ছবি: সংগৃহীত
সাহিত্য ও শিল্পে বহুবার উঠে এসেছে রোমান গ্ল্যাডিয়েটরদের বন্য প্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধের কাহিনি। এবার সেই ঘটনার প্রথম বাস্তব শারীরিক প্রমাণ মিলল যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক শহরের কাছে এক রোমান যুগের কঙ্কাল বিশ্লেষণে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটাই ইউরোপে গ্ল্যাডিয়েটর ও সিংহের লড়াইয়ের প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
২০০৪-২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের ইয়র্ক শহরের উপকণ্ঠে এক নগর উন্নয়ন প্রকল্পের সময় প্রাচীন রোমান যুগের প্রায় ১০০টি মানুষের কঙ্কাল খুঁজে পান গবেষকরা। ইয়র্ক শহরটি একসময় রোমানদের ইবোরাকাম নামে পরিচিত ছিল। এসব কঙ্কালের বেশিরভাগই ছিল তরুণ পুরুষ, যাদের শরীরে ছিল আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন এবং অনেকের মাথা আলাদা করা ছিল।
এই কঙ্কালগুলোর মধ্যে একটি ছিল সবচেয়ে ব্যতিক্রম। ওই ব্যক্তির উভয় পাঁজরের হাড়ে গভীর ছিদ্র ও চাপের চিহ্ন ছিল, যা প্রাথমিকভাবে কোনো মাংসাশী প্রাণীর কামড় বলে মনে হয়েছিল।
তদন্তে নেতৃত্ব দেন আয়ারল্যান্ডের মেনুথ ইউনিভার্সিটির গবেষক টিম থম্পসন। তিনি ও তার দল ৩ডি স্ক্যানের মাধ্যমে পাঁজরের হাড় বিশ্লেষণ করেন এবং তা চিড়িয়াখানার সিংহ, চিতা, বাঘ ও চিতাবাঘের কামড় খাওয়া ঘোড়ার হাড়ের সঙ্গে তুলনা করেন।
ফলাফল অত্যন্ত চমকপ্রদ—দেখা যায়, কঙ্কালটির হাড়ে থাকা ১০টি কামড়ের চিহ্ন সিংহের কামড়ের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। দাঁতের গভীরতা, কামড়ের কোণ এবং হাড়ে প্রবেশের ধরণ একেবারে একই রকম।
থম্পসন বলেন, “এটি বড় দাঁতের প্রাণীর কামড়, যা শরীরের একাধিক স্তর ভেদ করে হাড়ে পৌঁছেছে।” তবে, কামড়টি মৃত্যুঘাতী ছিল না। গবেষকদের ধারণা, ওই ব্যক্তি হয়তো আগে থেকে আহত ছিলেন, পরে সিংহ তাকে টেনে নিয়ে যায় এবং কামড় দেয়।
রোমান যুগে গ্ল্যাডিয়েটরদের বন্যপ্রাণীর সঙ্গে লড়াইয়ের দৃশ্য নানা শিল্পকর্ম ও সাহিত্যে পাওয়া গেলেও, এতদিন কোনো কঙ্কালে বন্য প্রাণীর আক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এটি সেই দিক থেকে প্রথম শারীরিক প্রমাণ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিল।
মুমু ২