ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বায়েজিদ বোস্তামির মাজারের রহস্যময় কচ্ছপ

আবুল হাসনাত, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৯:১১, ২৩ মে ২০২৫; আপডেট: ০৯:১৫, ২৩ মে ২০২৫

বায়েজিদ বোস্তামির মাজারের রহস্যময় কচ্ছপ

ছবি: জনকন্ঠ

চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামির মাজার শুধু একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান নয়—এটি ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা এবং অলৌকিকতার এক আশ্চর্য মিলনস্থল। শত শত বিরল প্রজাতির কচ্ছপ আর লোককথার জাল বুনে রেখেছে এক রহস্যময় পরিবেশ।

চট্টগ্রামের শহরতলির বুকে ছায়াঘেরা এক পবিত্র স্থান—বায়েজিদ বোস্তামির মাজার। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি শুধুমাত্র ধর্মপ্রাণ মানুষের ভক্তির স্থান নয়, বরং ইতিহাস ও লোকবিশ্বাসের এক অনন্য কেন্দ্রবিন্দু। মাজার চত্বরে পা রাখলেই যেন সময় থেমে যায়—চারপাশে শুধু নিরবতা, কবরের ধূপগন্ধ আর পুকুরের জলে ভাসমান শত শত কচ্ছপের ধীর গতি।

স্থানীয়ভাবে ‘মাজার শরিফ’ নামে পরিচিত এই স্থানে প্রতিদিনই ভিড় করেন হাজারো মানুষ—কেউ মানত করতে, কেউবা নিছক কৌতূহলে। কিন্তু সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মাজার সংলগ্ন পুকুরের কচ্ছপগুলো। এরা সাধারণ কোনো কচ্ছপ নয়, অন্তত স্থানীয়দের বিশ্বাস তাই বলে। কেউ মনে করেন, এরা অলৌকিক কোনো শক্তির বাহক, কেউ বলেন, এরা মাজারের রক্ষাকর্তা। বহু বছর ধরে এই পুকুরে কচ্ছপ থাকা সত্ত্বেও এদের কোনো আঘাত বা অনিষ্ট হয় না—এমনটাও দাবি করেন অনেকে।

মাজারে আসা এক বৃদ্ধ ভক্ত জানালেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই এই কচ্ছপগুলোকে দেখে আসছি। এগুলা আল্লাহর রহমত। যে যা চাই, মন থেকে চাইলে মিলে যায়।”

ঐতিহাসিক তথ্যে জানা যায়, এই মাজার গড়ে ওঠে পঞ্চম শতকের খ্যাতনামা সুফি সাধক হজরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহ.)-এর নামানুসারে। যদিও তার প্রকৃত জন্মস্থান ইরানের বোস্তাম শহর, তবে লোককথায় প্রচলিত আছে, তিনি অলৌকিকভাবে চট্টগ্রামে এসেছিলেন এবং এখানেই আত্মিক অবস্থান করেন। অনেকেই মনে করেন, এই স্থান তার আধ্যাত্মিক প্রভাবেই চিরকাল পবিত্র হয়ে আছে।

চট্টগ্রামের ইতিহাসবিদদের মতে, এ অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে সুফি প্রভাবিত অঞ্চল ছিল। বায়েজিদ বোস্তামি নামের মাজার সেই সুফি সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। সুফিবাদে অলৌকিকতা, প্রকৃতির সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক এবং মানুষের অন্তর্দর্শন—সবকিছুই এই মাজারকে ঘিরে প্রতিফলিত হয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের শহর বদলে গেছে। উঁচু দালান, যানজট, কোলাহল—সবই ছুঁয়ে গেছে এই এলাকা। কিন্তু মাজার আর কচ্ছপের পুকুর যেন সময়ের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আজও এই স্থান নতুন প্রজন্মের জন্য কৌতূহল, ইতিহাস সন্ধানীদের জন্য গবেষণার ক্ষেত্র এবং ভক্তদের জন্য তীর্থযাত্রার স্থান।

মুমু

×