ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লালমনিরহাটে কোরবানির ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত কামাররা

মোঃ রয়িসুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ১৪:২২, ২৩ মে ২০২৫

লালমনিরহাটে কোরবানির ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত কামাররা

ছবি: জনকন্ঠ

লালমনিরহাটে কোরবানির ঈদে লক্ষ লক্ষ গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষ, উট, দুম্বা ইত্যাদি পশু কোরবানি করা হয়। এসব পশু জবাই থেকে শুরু করে রান্নার চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্যন্ত নানা ধরনের হাতিয়ার সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে।

কামার একটি প্রাচীন পেশা হলেও দিন দিন এই পেশাটা হারিয়ে যাচ্ছে। কেননা এখন আধুনিক যুগে সব ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। যার ফলে কামার পেশা থেকে অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

ছুরি, চাকু, দা, চাপাতি এসব তো নিত্যদিন ব্যবহার করা হয়েই থাকে, কিন্তু কোরবানির ঈদে এসবের গুরত্ব সবচেয়ে বেশি। কোরবানির ঈদের পশু জবাইকে কেন্দ্র করে লালমনিরহাট জেলার প্রত্যন্ত জনপদগুলোতে কামার পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদির দোকানদাররা (কামার) অনেকটাই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জ্বলন্ত আগুনে গরম লোহার পিটাপিটির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারপাড়ার দোকানগুলো। আবার এসব ধাতব সরঞ্জামাদি শান দিতে কামারের দোকানগুলোতে ক্রমেই ভিড় চোখে পড়ছে।

লালমনিরহাট জেলার অন্যতম বৃহৎ হাট-বাজারের কামারপাড়াগুলোর ব্যস্ততা এখন সবচেয়ে বেশি। জেলার মহিষখোচা, বুড়িরহাটমোগলহাট, দুড়াকুটিহাট, কুলাঘাট, মহেন্দ্রনগর, বড়বাড়ি, নয়ারহাট, বিডিআরহাট সহ বিভিন্ন হাট-বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, পশু জবাইয়ের হাতিয়ারগুলো কিনতে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড়।

বড় ধরনের ছুরিগুলোর দাম তিনশত টাকা থেকে পনেরশ টাকা পর্যন্ত এবং ছোট ছুরি দাম একশত টাকা থেকে তিনশত পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত। মাঝারি ছুরিগুলো পাওয়া যাবে তিনশত টাকা থেকে একহাজার দুইশত টাকা পর্যন্ত। দেশি চাপাতিগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতি কেজি ওজনের চাপাতির দাম তিনশত পঞ্চাশ টাকা থেকে একহাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বিদেশি চাপাতির দাম পড়বে চারশত টাকা থেকে একহাজার তিনশত টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি বঁটির দাম পড়বে দুইশত টাকা থেকে একহাজার একশত টাকা পর্যন্ত। হাড় কাটার ছোট চাইনিজ কুড়াল পাওয়া যাবে তিনশত পঞ্চাশ টাকা থেকে আটশত টাকা পর্যন্ত।

এদিকে গাছের গুঁড়ির কাঠ পাওয়া যাবে তিনশত টাকা থেকে আটশত টাকা পর্যন্ত। মাংস রাখার পলি ও প্লাস্টিকের ম্যাটের দাম তিনশত টাকা থেকে সাতশত টাকা। বিভিন্ন ধরনের চপিং বোর্ড কেনা যাবে চারশত টাকা থেকে একহাজার টাকায়। হ্যান্ড মিট কাটার পাওয়া যাবে দুইশত টাকা থেকে পাঁচশত টাকায়। জীবাণু ও দুর্গন্ধনাশক তরল ও ফ্লোরেক্স বোতল প্রতি দাম পড়ে একশত সত্তর টাকা থেকে ছয়শত টাকা পর্যন্ত।

হাতিয়ার ক্রয় করতে আসা মহিষখোচা ইউনিয়নের সোহান জানান, ঈদের আগেই নতুন ছুরি কেনার কাজটি আগেভাগেই সেরে রাখা ভালো। আর সময় থাকতে এসব কাজ শেষ না করলে শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়োয় চড়া দাম গুনতে হবে।

অপর এক ক্রেতা মোঃ মমিনুর রহমান মমিন জানান, কোরবানির ঈদ এলেই পশু কোরবানি দেয়ার এবং মাংস কাটার জন্য দা-বঁটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি হাতিয়ারের প্রয়োজন হয়। তাই এসব হাতিয়ার ঈদের আগেই ক্রয় করে রাখতে হয়। যদিও আগে কিছু কেনা ছিল, সচরাচর এগুলো জিনিসের সব সময় প্রয়োজন না হওয়ায় অনেক হাতিয়ার হারিয়ে গেছে তাই নতুন করে আবারও কিনতে হচ্ছে।

কোরবানীর সরঞ্জাম তৈরির কারিগর (কামার) জসিম উদ্দিন বলেন, কোরবানির ঈদ এলেই আমাদের দা-বঁটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি হাতিয়ার গুলোর চাহিদা বেড়ে যায়, তাই আমরা আগে থেকেই এসব হাতিয়ার তৈরি করে রাখার চেষ্টা করি। অন্যান্য সময়ের থেকে কোরবানি ঈদে আমাদের হাতিয়ার ব্যবসাটা একটু ভাল হয়। তাই আমরা এই কোরবানি ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকি। সবমিলে এই ঈদে আমাদের ব্যবসা ভাল হওয়ায় আমরা খুশি।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ইটাপোতা, বুমকা, কর্ণপুর আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের পুরান ভেলাবাড়ীসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় শতাধিক পরিবারের কামাররা তাদের পৈতৃক পেশা। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে হলেও দুমুঠো ভাতের আশায় তারা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

মুমু

×