
কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে, মুকসুদপুরের ঐতিহ্য "সের"। ‘সের’ বা ‘স্যার’ একটি পরিমাপের একক যা ভর পরিমাপের জন্য একসময় বাংলায় এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হতো। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান- এ অঞ্চলে শব্দটি খুবই পরিচিত। ১ সের প্রায় ৯৩৩.১ গ্রাম (একক)-এর সমান।
দেশীয় রীতিতে ওজন পরিমাপের বা ভারের একক ‘সের’। ১ সের পরিমাণ ধান-চাল মাপার যে বস্তুটি/পাত্রটি তার নাম ‘পুরা’। যা সাধারণত বেত কিংবা বাঁশের বেতি দিয়ে তৈরি করা হতো। বানানোর পর পুরাটিকে গোবর/গাবের রস দিয়ে মুড়িয়ে শুকিয়ে নেয়া হতো। যাতে বাঁশ-বেত ঘুণে পোকায় না খায়।
পুরা যে শুধু এক সের পরিমাণ চাল ধরে সেই মাপের ছিল তা নয়। অনেকে ২ সের, ৫ সেরের পুরাও বানিয়ে নিতো মাপার সুবিধার্থে। বর্তমানে শহর কিংবা গ্রামে টিনের বা স্টিলের পট ব্যবহার করে চাল মেপে রান্না করতে নেয়া হয়।
১৯৮২ সালের পহেলা জুলাইয়ের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত সময়ে বহুলভাবেই প্রচলিত ছিল। আর ১৯৮২ সালের পহেলা জুলাইয়ে আমাদের দেশে ম্যাট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ধীরে ধীরে দেশীয় রীতির পরিমাপ পদ্ধতিটির বিলুপ্তি শুরু হয়। আশির দশকে রেডিও খুবই জনপ্রিয় ছিল। তখন দীর্ঘদিন ধরেই রেডিওতে একটি ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘১ জুলাই থেকে মেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে, তাই আর বাংলা পদ্ধতিতে পরিমাপ চলবে না এখন মেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। সেরের পরিবর্তে কেজি ইত্যাদি।’
কবি প্রভাষক সনোজ কুণ্ডু লিটু বলেন, এখন গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে কেজি চলে আসছে। এমনকি বাড়িতে বাড়িতেও কেজির মাপের জন্য ইলেকট্রিক ওজন পরিমাপক, দাড়িপাল্লা চলে এসেছে। আর কমে গেছে সের এর ব্যবহার।
মুমু