আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে স্টিচড কোলাজ শীর্ষক প্রদর্শনীর একটি শিল্পকর্ম দেখছেন দর্শনার্থীরা
শিল্পকৌশল হিসেবে কোলাজের বয়স দুই হাজার বছরের বেশি। আধুনিক শিল্পধারা বা মডার্ন আর্টের যুগে পিকাসো, জর্জ ক্রাক, অঁরি মাতিস কিংবা ভাসিলি কঁদিনিস্কির মতো মহান শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় ধন্য হয়েছে এই শিল্প। আর এই কিংবদন্তি শিল্পীদের মধ্যে ভাসিলি কঁদিনিস্কি ও মাতিসের শিল্পকর্ম একই সঙ্গে বিস্মিত ও অনুপ্রাণিত করেছে সুরঞ্জনা ভট্টাচার্যকে।
অভিভূত হওয়ার সেই উপলব্ধি থেকে একসময় সুরঞ্জনা নিজেও সম্পৃক্ত হয়েছেন কোলাজের সেই বর্ণিল ভুবনে। নানা রঙের টুকরো কাপড় জোড়া দিয়ে গড়েছেন নানা অবয়ব। সেসব শিল্পকর্ম নিয়ে ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘স্টিচড কোলাজ’।
সুরঞ্জনার সৃষ্ট কোলাজে রয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত রঙের বৈভব। জোড়া দেওয়া রঙিন কাপড়ের মাঝে মেলে ধরেছেন মনুষ্য অবয়ব। কোনো কোনো শিল্পকর্মে আবার মূর্ত হয়েছে গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। সেখানে নিসর্গের মাঝে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় পাখির ঝাঁক। একটি ফ্রেমে নানা অনুষঙ্গের মাঝে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন লাল-সবুজে আবৃত বাংলাদেশের পতাকা। কিছু কাজ আবার চিত্রকর্মের অনুসরণে পেয়েছে রেখানির্ভর অবয়ব। এর বাইরে বিমূর্ত আঙ্গিকেও কোলাজনির্ভর শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন সুরঞ্জনা।
সূচিকমের্র প্রতি আশৈশব ঝোঁক ছিল নারায়ণগঞ্জে জন্ম নেওয়া এবং চট্টগ্রাম ও নরসিংদীতে বেড়ে ওঠা সুরঞ্জনার। পরবর্তীতে নরসিংদীর সরকারি কারিগরি বিদ্যালয়ে সূচিকর্মের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তবে সূচিকর্মের সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগল প্রায় দুই দশক পর। কারণ, প্রায় এক যুগ আগে তিনি দুরারোগ্য ডিস্ট্রোফি রোগে আক্রান্ত হন; যার ফলে তার বাম হাত প্রায় অকেজো হয়ে যায়।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অন্যতম যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত কাপড়ের ফালি দিয়ে কোলাজ করতে শুরু করেন। মাতিসের করা নীল নারীর কোলাজের একটি অনুলিপি টাঙানো ছিল শিল্পীর ঘরের দেওয়ালে। এই কোলাজ যখন মাতিস সৃষ্টি করেন তখন তিনিও প্রায় অন্ধ ছিলেন। আর কাকতালীয়ভাবে এই শিল্পকর্মটি সুরঞ্জনাকে ধাবিত করেছে শিল্প সৃজনের পথে। সেই বাস্তবতায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে ছাপিয়ে আপন সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে কল্পনার মিশেলে গড়েছেন কোলাজনির্ভর শিল্পকর্ম।
আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। সোম থেকে শনিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই প্রদর্শনী।
লিবারেশন ডকফেস্টের সমাপ্তি ॥ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব ‘লিবারেশন ডকফেস্ট বাংলাদেশ’-এর শেষদিন ছিল সোমবার। এদিন বিকেলে সমাপনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় জাদুঘর মিলনায়তনে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জিয়াদ এম. এইচ হামাদ। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
টেক্সিবল শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে সেরা ছবির পুরস্কার পান স্পেনের নির্মাতা টোম্যাসো স্যান্টাসবোগিও। জাতীয় প্রতিযোগিতা বিভাগে দ্যা স্ক্র্যাপ ছবির জন্য সেরা ছবির পুরস্কার পান মাসুদুর রহমান। স্টুডেন্ট পার্সপেক্টিভ বিভাগে অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পায় বাহাদুর শাহ জাফর, ফাহমিদা আদনানা ও জেরিন তাসনিম রোজা পরিচালিত ছবি ‘বানায়ন- এসাইলেন্ট উইটনেস’।
এছাড়া জাতীয় বিভাগে ইয়ুথ জুরি পুরস্কার পায় ব্রাত্য আমিন পরিচালিত ছবি ‘কোম্পানিদেশ’। আন্তর্জাতিক বিভাগে ইয়ুথ জুরি পুরস্কার পেয়েছে ইরানের নির্মাতা মেহদি ফালাহি পরিচালিত ছবি ‘দ্যা মাদার অব মাইগ্রেশন’। অনুষ্ঠানে জুরি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা হাওবাম পবন কুমার এবং কৃষ্ণেন্দু বোস। জাতীয় বিভাগে বিজয়ী ছবির নির্মাতাকে এক লাখ টাকা এবং আন্তর্জাতিক বিভাগে বিজয়ী ছবির নির্মাতােেক এক হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়া হয়।
এছাড়া ‘স্টুডেন্ট পার্সপেক্টিভ’ বিভাগে নির্বাচিত ৬টি চলচ্চিত্র থেকে সর্বাধিক দর্শক ভোট পাওয়া ছবিকে অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। পুরস্কার প্রদান শেষে পুরস্কৃত চলচ্চিত্রের বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।