ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এক সড়কে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট

​​​​​​​মো. খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:১৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

এক সড়কে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট

নারায়ণগঞ্জে ১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভাষা সৈনিক বেগম নাগিনা জোহা সড়কটি চালু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ম

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ফতুল্লায় ১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভাষা সৈনিক বেগম নাগিনা জোহা সড়কটি বদলে দিয়েছে আশপাশের এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার পরিবেশ। সড়কটির কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের , ১০ নম্বর ওয়ার্ডবাসী ফতুল্লার হাজীগঞ্জ তল্লাসহ আশপাশের মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। রাতারাতি জমির দামও হু হু করে বেড়ে গেছে। সড়কটির উভয় পাশের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, সড়কটি নির্মিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ-বরফকল-আদমজী-শিমরাইল পুরাতন সড়কের একটি অংশের যানজটও কমে এসেছে। সড়কটি চালু হওয়ায় চাষাঢ়া থেকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে আদমজী ইপিজেড পর্যন্ত যানজটমুক্ত পরিবেশে চলাচল করতে পারছে এখানকার লোকজন। সড়কটির কারণে অর্থনৈতিকভাবেও উন্নত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। সড়কটি নির্মিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখানকার মানুষের আমূল পরিবর্তন এসেছে। সময়ের অবহেলিত পরিত্যক্ত চাষাঢ়া-আদমজী-সিদ্ধিরগঞ্জ  রেলপথটি এখন সড়কে পরিণত করায় জনপ্রতিনিধি স্থানীয়রা আনন্দে উচ্ছ্বসিত। গত ১৪ নভেম্বর গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষা সৈনিক বেগম নাগিনা জোহা নামের সড়কটি উদ্বোধন করেন। নির্মাণ শেষে উদ্বোধনের আগ থেকেই সড়কে যানবাহনের চলাচল শুরু হয়। এখন ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল বেড়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, অধুনালুপ্ত আদমজী পাটকল নারায়ণগঞ্জ সাইলোকে (খাদ্যগুদাম) কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল চাষাঢ়া-আদমজী-সিদ্ধিরগঞ্জ রেলপথ। রেলপথে আদমজী পাটকলে সাইলোতে মালামাল পরিবহন করা হতো। কিন্তু আদমজী পাটকলটি চালু থাকতেই চাষাঢ়া-আদমজী-সিদ্ধিরগঞ্জ রেলপথটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। বহু বছর ধরে চাষাঢ়া-আদমজী-সিদ্ধিরগঞ্জ রেলপথটি সড়কপথে রূপান্তর করার দাবি ওঠে স্থানীয়দের। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান পরিত্যক্ত চাষাঢ়া-আদমজী-সিদ্ধিরগঞ্জ রেলপথটি সড়কে পরিণত করতে সকল কার্যক্রম শুরু করেন। অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকার চাষাঢ়া-আদমজী-সিদ্ধিরগঞ্জ রেলপথটি চাষাঢ়া থেকে আদমজী পর্যন্ত সড়কে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রথমে সড়কটির নাম দেওয়া হয় চাষাঢ়া-খাঁনপুর-হাজীগঞ্জ-গোদনাইল-আদমজী সড়ক। পরে সড়কটি নারায়ণগঞ্জ- আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের মাতাভাষা সৈনিক বেগম নাগিনা জোহার নামে নামকরণ করা হয়। সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগ- এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সামিউল কাদের খান বলেন, ১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ভাষা সৈনিক বেগম নাগিনা জোহা সড়কটির নির্মাণকাজ শেষে গত ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ফেরুয়ারি মাসে। এর নির্মাণকাজ শেষ হয় চলতি বছরের ২২ জুনে। তিনি বলেন, সড়কটির দৈর্ঘ্য ছয় দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। সড়কটিতে রয়েছে তিনটি ব্রিজ, একটি কালভার্ড, ড্রেন ফুটপাত। খবর নিয়ে জানা যায়, ভাষা সৈনিক বেগম নাগিনা জোহা সড়কটি সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়কে ফতুল্লার চানমারীতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্করোডে গিয়ে মিলিত হয়েছে। সড়কটির উভয় পাশে আদমজীর সোনামিয়া বাজার, এসওরোড, সুমিলপাড়া, বার্মাস্ট্যান্ড, ২নং ঢাকেশ্বরী, গোদনাইলের আরামবাগ, চৌধুরীবাড়ি, পাঠানটুলী, হাজীগঞ্জ, তল্লা পশ্চিম তল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা রয়েছে। এক সময় এসব এলাকার লোকজন নারায়ণগঞ্জ-আদমজী- ডেমরা সড়ক দিয়ে চলাচল করত। এখন তাদের এলাকায় ভাষা সৈনিক বেগম নাগিনা জোহা সড়কটি নির্মিত হওয়ায় বদলে গেছে সড়কের আশপাশের পরিবেশ। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও বেড়ে গেছে। এখানকার লোকজন যানজটমুক্ত পরিবেশে অল্প সময়ের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াত করতে এবং ফিরতে পারছে।

গোদনাইলের এসও রোডের দোকানি মানিক মিয়া বলেন, সড়কটি নির্মিত হওয়ায় বদলে দিয়েছে এখানকার পরিবেশ। সড়কের উভয় পাশে গড়ে উঠছে দোকান-পাট, বহুতল ভবন নানা স্থাপনা। সড়কটি ঘিরে মানুষের জীবন যাত্রার মানও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া পুরাতন নারায়ণগঞ্জ-শিমরাইল সড়কটির বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কটি চালু হওয়ার পর থেকে আদমজী থেকে আইইটি স্কুল পর্যন্ত কোনো যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না। কারণ পুরাতন সড়কে যানজট সৃষ্টি হলে নবনির্মিত ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা সড়কটি দিয়ে যানজটমুক্ত পরিবেশেই নারায়ণগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাচ্ছে। একই এলাকার ভ্যানগাড়িচালক মোজাম্মেল হক বলেন, সড়কটি নির্মিত হওয়ায় সহজেই মালামাল নিয়ে চলাচল করতে পারছি।

×